টানা দুই দিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কিশোরগঞ্জ হাওরের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে ওই সব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে কিছু মানুষ সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। অন্যরা পড়েছে দুর্ভোগে।

শনিবার (১৮ জুন) জেলার ওই সব এলাকার জন্য সরকারিভাবে দুই হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার, ১৪০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, টানা দুই দিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার বেশি এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বেশি প্লাবিত হয়েছে ইটনা উপজেলা। ইটনা উপজেলার প্রায় ৮০ ভাগ এলাকা ইতিমধ্যেই প্লাবিত হয়েছে।

সূত্রগুলো বলছে, এভাবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে এ উপজেলাগুলোয় ভয়াবহ বন্যা হয়ে যাবে। যেসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে, সেসব এলাকার মানুষ ইতিমধ্যেই বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র আশ্রয় নিয়েছে।

ইটনা উপজেলার লাইমপাশা, মৃগা, আমিরগঞ্জ, নুরপুর, বানিহাটী, পুরান হাটীতে পানি ঢুকে রাস্তাঘাট ও বাজার তলিয়ে গেছে। এসব গ্রামের অন্তত ১০টি মাছের পুকুর পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। মিঠামইন উপজেলার চারপাশে নির্মাণাধীন অনন্ত ৩০টি গ্রাম পানিতে ডুবেছে। এসব গ্রামের লোকজন তাদের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। এসব গ্রামের বাড়িঘর এখন পর্যন্ত এক ফুট পানির ওপরে ভাসছে। যেকোনো সময় প্রবল বাতাস ও বৃষ্টির কারণে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অষ্টগ্রাম উপজেলার বাগপাড়া, দালান হাটি, রংপুর হাটি ও স্বপন পাড়াসহ অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নিকলী উপজেলার দামপাড়া ও শিংপুরসহ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় যে ১৭টি জেলায় বন্যা হবে, তার মধ্যে কিশোরগঞ্জ জেলার কথাও বলা হয়েছে। তাদের সূত্রমতে, কিশোরগঞ্জে হাওর এলাকার অনেক এলাকা ইতিমধ্যে প্লাবিত হয়ে গেছে। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, গতকাল গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার বিভিন্ন পয়েন্ট গড়ে তিন ফুট পানি বেড়েছে।

ইটনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাফিসা আক্তার ঢাকা পোস্টকে জানান, ইটনা উপজেলার ৮০ ভাগ এলাকা ইতিমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষ ইটনা সদরে অবস্থিত সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে সকাল থেকেই প্লাবিত এলাকার তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ তথ্যগুলো জেলায় পাঠানো হবে।

নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু হাসান ঢাকা পোস্টকে জানান, ইতিমধ্যেই উপজেলার কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জে যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, এভাবে বৃষ্টি হলে নিকলী উপজেলার অনেক এলাকায়ও বন্যা হয়ে যাবে।

কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেভাবে কিশোরগঞ্জের নদ-নদীর পানি বাড়িতেছে, সিলেট ও সুনামগঞ্জের মতো কিশোরগঞ্জের অবস্থাও ভয়াবহ হবে। গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন পয়েন্টে পানি ৩ ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন্যা পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন করতে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে হাওর অঞ্চল ঘুরে দেখেছি। হাওরের অনেক এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। সেখানকার লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত দুই হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার, ১৪০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এসকে রাসেল/এনএ