টাঙ্গাইলে যমুনা নদীতে ভাঙন, দুর্ভোগে মানুষ
টাঙ্গাইলে যমুনায় পানি বাড়তে শুরু করেছে। নদীতে স্রোতের কারণে শুরু হয়েছে ভাঙন। এতে নতুন করে গৃহহীন হচ্ছে নদীপারের মানুষ। এ ছাড়া নদীপথ পরিবর্তন হওয়ায় নতুন নতুন এলাকা ভাঙনের কবলে পড়ছে।
এদিকে গেল ২৪ ঘণ্টায় ভূঞাপুর যমুনা নদীতে ১০ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে যমুনা নদীর বঙ্গবন্ধু সেতু পাড়ে ৩৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে দেখা গেছে, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কষ্টাপাড়া ও চিতুলিয়াপাড়া এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে নদীতে বালুভর্তি প্লাস্টিকের বস্তা ফেলছেন। এ ছাড়া পানি বাড়ায় গাবসারা ও অর্জুনা ইউনিয়ন চরাঞ্চলের কয়েক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বন্যাকবলিত পরিবারগুলোকে।
এ ছাড়া কালিহাতী উপজেলার গোবিন্দপুর, গোহালিয়া বাড়ি ইউনিয়ন এবং টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বেশ কিছু এলাকার নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ১০ হাজার মানুষ। পানিতে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার একর জমির পাট, আউশ ধান, তিল, বাদামসহ বিভিন্ন ফসল।
বিজ্ঞাপন
তবে যমুনার ভাঙন ঠেকাতে এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাসাইল উপজেলার বাসাইল দক্ষিণ পাড়া-বালিনা সড়কের একটি অংশ তীব্র পানির স্রোতে ভেঙে গেছে। ফলে বন্যার পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।
ভূঞাপুরের কষ্টাপাড়া গ্রামের শ্যামল ভৌমিক জানান, নদীতে পানি বাড়ায় স্রোতে বসতভিটা নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। ভাঙতে ভাঙতে এখন শুধু বাড়ির ঘরটিই অবশিষ্ট রয়েছে। তিন বছর ধরে ভাঙন শুরু হয়েছে। বসতভিটার সামনে নদীর দিকে অনেক বসতি ছিল। কিন্তু যমুনার ভাঙনে পরিবারগুলো তাদের ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে।
গোবিন্দাসী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মনির বলেন, ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে এখন শুধু বাড়িটিই অবশিষ্ট রয়েছে। গেল কয়েক দিনে যমুনা নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানির স্রোত পূর্ব দিকে হওয়ায় নদীপাড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ঘরবাড়ি নদীতে চলে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে নদীতে জিও ব্যাগ ফেলার জোর দাবি জানাই।
চিতুলিয়াপাড়ার আল আমিন জানান, হঠাৎ ভাঙন শুরু হওয়ায় কয়েক ঘরবাড়ি সরিয়ে নেওয়া হয়। স্থানীয়রা ভাঙনরোধে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে নদীতে প্লাস্টিকের বস্তা ফেলেছে। তবে প্রাথমিকভাবে জিও ব্যাগ ফেললে নদীপাড়ের অর্ধশতাধিক পরিবার ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পাবে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, যমুনা ও ঝিনাই নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া অন্য সব নদীর পানিও বাড়ছে। এতে জেলায় বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আহ্সানুল বাশার জানান, বন্যায় যমুনা নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ায় পাট, আউশ ধান, তিল, শাকসবজিসহ বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যার পানি সপ্তাহখানেরকের মধ্যে নেমে গেলে ফসলের খুব একটা ক্ষতি হবে না। তবে তার থেকে সময়সীমা বেশি হলে ফসল নষ্ট হয়ে যাবে।
জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
অভিজিৎ ঘোষ/এনএ