বাগেরহাট সদর উপজেলায় পারিবারিক কলহের জেরে গ্রাম আদালতের সালিস বৈঠকে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যসহ একই পরিবারের চারজনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সোমবার (২০ জুন) বিকেলে ওই চারজনকে বাগেরহাট চিফ জুডিশিয়াল আদালতে হাজির করলে বিচারক আবির পারভেজ তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। 

এর আগে রোববার (১৯ জুন) বিকেলে সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে এই হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় ঠেকাতে এসে গ্রামপুলিশসহ অন্তত চারজন আহত হন।

সোমবার সকালে কাড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ এনে বাগেরহাট মডেল থানায় একটি মামলা করেন।

হামলা ও ভাঙচুরে জড়িত দুই পুলিশ সদস্য হলেন, পুলিশ কনস্টেবল ফয়সাল আহম্মেদ নাদিম, তার বাবা আর্মড পুলিশের এস আই ফারুক আহম্মেদ। অপর দুইজন হলেন নাদিমের দুই ভাই মেহেদী ও ইব্রাহীম।

কনস্টেবল ফয়সাল আহম্মেদ নাদিম ঢাকার মিরপুর স্টাফ কলেজে কর্মরত এবং তার বাবা ফারুক আহম্মেদ খুলনার খানজাহান আলী সেতু টোল প্লাজায় আর্মড পুলিশের এস আই হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। মেহেদী ও ইব্রাহীম দুজন-ই শিক্ষার্থী।

কাড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিতুর রহমান পল্টন বলেন, দুই বছর আগে কাড়াপাড়া গ্রামের মানিক শিকদারের মেয়ে হুমায়রা জান্নাতের সঙ্গে একই এলাকার ফারুক আহম্মেদের ছেলে পুলিশ কনস্টেবল ফয়সাল আহম্মেদ নাদিমের বিয়ে হয়। সম্প্রতি পারিবারিক কলহের জেরে নাদিমের মা ইউনিয়ন পরিষদে বিরোধ মিমাংসার জন্য আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে দুই পক্ষকে নোটিশের মাধ্যমে রোববার গ্রাম্য আদালতের দিন ধার্য করা হয়। 

সেই অনুযায়ী এদিন বিকেলে সালিস বৈঠকের এক পর্যায়ে নাদিম উত্তেজিত হয়ে তার স্ত্রীর দিকে তেড়ে যায়। এ সময় বাধা দিলে নাদিম ও তার ভাইয়েরা মারধর শুরু করে। এতে গ্রাম পুলিশের দফাদার লুৎফর রহমান, গ্রাম পুলিশ নয়ন ও ফরহাদ এবং স্থানীয় জাহাঙ্গীর আহত হন। এর মধ্যে দফাদার লুৎফুর এর মাথা ফেটে যাওয়ায় তাকে খুলনার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নাদিমের স্ত্রী হুমায়রা জান্নাত বলেন, আমার স্বামী পরকীয়ায় আসক্ত ছিল। আমি মানা করলেই আমাকে মারত। আমার বাচ্চা নষ্ট করতে বলেছে, রাজি না হওয়ায় এখন বাচ্চা অস্বীকার করছে। প্রায় এক বছর কোনো ভরণপোষণ ও দেয় না। এ ছাড়া বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য স্বামী-শাশুড়ি আমার ওপর নানাভাবে নির্যাতন করত। এক পর্যায়ে টাকা না দেওয়ায় আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। আমার ২২ দিনের শিশু সন্তান রয়েছে। আশা করেছিলাম সন্তান নিয়ে স্বামীর ঘরে সুখে-শান্তিতে বসবাস করব। কিন্তু সালিস বৈঠকে আমার পরিবার এমনকি স্থানীয়দের অপমান করেছে তারা।

হুমায়রার বাবা মানিক শিকদার বলেন, বিয়ের পর থেকেই ২০ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য মেয়েকে চাপ প্রয়োগ করত নাদিম ও তার পরিবার। টাকা না দেওয়ায় মেয়ের ওপর প্রায়ই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাত তারা। এমনকি অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। বর্তমানে তার ২২ দিন বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। সালিস বৈঠকে এ ধরনের হামলা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া কিছু নয়। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠ এবং কঠোর বিচার দাবি করছি।

এদিকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার আগে ফয়সাল আহম্মেদ নাদিম বলেন, আমরা হামলা করিনি, উল্টো আমরা মার খেয়েছি। আবার ঝামেলায়ও পড়েছি।

বাগেরহাটের পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক বলেন, পারিবারিক কলহের জের ধরে ইউনিয়ন পরিষদে সালিসের মধ্যে হামলার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার চারজনকে এদিন দুপুরে আদালতে প্রেরণ করা হয়।

তানজীম আহমেদ/আরআই