কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও দুর্ভোগ কমেনি বন্যাকবলিত মানুষের। পানি কমায় বানভাসি মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। কিন্তু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এখনই উঠতে পারছে না তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বানের জলে অনেকের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, কারও দরজা-জানালা ভেসে গেছে। অনেক বাড়িতে এখনো হাঁটুসমান কাদা। এসব সারানোর বা নির্মাণের অর্থকড়িও নেই তাদের হাতে।

বাসিন্দারা জানান, আর কয়দিন বাদেই ঈদ উৎসব। ঈদের আগেই ঘরবাড়ি বাস উপযোগী করা তাদের কাছে কষ্টসাধ্য ব্যাপার। যেখানে খাবারই জোটে না, সেখানে ঘর নির্মাণের এত টাকা কোথায় পাবে, সেই চিন্তা শুরু হয়েছে নতুন করে।

সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চর এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত আলো পারভিন বলেন, বন্যায় হামার ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছিল। নৌকায় ১২ দিন-রাত কাটাই ছিলোং। এলা পানি শুকাইছে। কিন্তু থাকার তো ঘর নাই। বন্যার পানিত ঘর ভাঙি পড়ছে মাটিতে। এখন পাশের বাড়িত হামরা থাইকতেছি কোনোরকম।

তিনি আরও বলেন, বন্যার জন্য তো কাজকর্ম বন্ধ হয়ে আছে। কীভাবে ঘরবাড়ি ঠিক করব আমরা? এই চিন্তা কিছু ভালো লাগে না। আর ছোট দুইটা বাচ্চা আছে। তাদের নিয়া খুব সমস্যায় পড়ছি। কতদিন যে অন্যের বাড়িতে থাকা লাগবে বুঝতেছি না। যে বাড়িতে আছি, সেই বাড়িতেও এখনো অনেক কাদা। ঠিকমতো রান্না করতে পারি না। এখন কী হবে?

একই এলাকার আমেনা বেগম বলেন, একই এলাকার আমেনা বেগম বলেন, এখন তো পানি শুকাইছে কিন্তু হামরা থাকমো কোনডাই? জায়গা তো নাই। বানের পানিত হামার বাড়ি ভাসি গেইছে। এত দিন তো (নাওয়ত) নৌকায় ছিলোং। সাহায্য না পাইলে না খেয়া মরা লাগত এডাই (এখানে)। আজ হামার স্বামী কিছু টিন কিনছে। থাকার জায়গা করা নাগবে। চারোদিকে এলাও পানি, বেড়বার পারছি না। পানিতে হাঁটাহাঁটি করতে করতে হাত-পা ধলা হইছে। আমার এডাই (এখানে) অনুমান ৮০টা ঘর থাকি। সবারে ঘরবাড়ি ভাঙা।

এ বিষয়ে যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গফুর বলেন, বন্যায় আমার ইউনিয়নে প্রায় ১৫ কিলোমিটার কাঁচাপাকা সড়কের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তা ছাড়া ৬৫টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। প্রায় ৩০০ বাড়িঘরের ক্ষতি হয়েছে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বন্যায় জেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মো. জুয়েল রানা/এনএ