পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকেই দৌলতদিয়া ঘাটে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ কমে গেছে। যানবাহন ঘাট এলাকায় এসে সরাসরি ফেরির দেখা পাচ্ছে। ফলে ঘাট এলাকায় অনেকটা থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যাত্রী ও যানবাহনের চাপ না থাকায় ঘাটকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য কমে গেছে।

মঙ্গলবার (২৮ জুন) সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ঘাট এলাকায় অবস্থান করে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় যাত্রী ও যানবাহনের চাপ নেই। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা যানবাহনগুলো ঘাট এলাকায় এসে সরাসরি ফেরির দেখা পাচ্ছে। 

ব্যস্ততম ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক একদমই ফাঁকা। ফেরির টিকিট কাউন্টারের সামনে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা যানবাহনের ঘাট প্রতিনিধিদেরও তেমন ব্যস্ততা নেই। নেই পণ্যবাহী গাড়ির দীর্ঘ সারি। ঘাটে আসা যানবাহনের মধ্যে রয়েছে বরিশাল, খুলনা বা গোপালগঞ্জ জেলার দূরপাল্লার পরিবহন। কোরবানির পশুবাহী ট্রাক সরাসরি ফেরির দেখা পাচ্ছে। এতে ট্রাকচালক ও শ্রমিকরা খুশি। তারা দৌলতদিয়া ঘাটে চাপ কমাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।

কুমারখালী থেকে আসা কোরবানির গরু বহনকারী ট্রাকচালক শরিফুল ইসলাম বলেন, গত বছর এই ঘাটে আমাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। নদী পার হতে মহাসড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। এতে গরমে অনেক পশু অসুস্থ হওয়াসহ মারাও গেছে। কিন্তু এ বছর ঘাটের চিত্র অনেকটাই আলাদা। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ঘাটে যানবাহনের চাপ নেই। আমি ঘাট এলাকায় এসে ১০ মিনিট অপেক্ষা করেই ফেরির দেখা পেয়েছি।

কুষ্টিয়া থেকে আসা এসবি সুপার ডিলাক্সের চালক রিয়াজুদ্দিন বলেন, হঠাৎ করেই ঘাটের চিত্র পাল্টে গেছে। ঘাটে এসে এখন আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। ফেরির টিকিট কাটতে যতটুকু সময় ব্যয় হচ্ছে। ঘাটে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, ফেরিগুলো যানবাহনের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে যানবাহন কম থাকায় ফেরিভর্তি হতে সময় লাগছে।

৫ নং ফেরিঘাটের পন্টুনে ডাব বিক্রেতা কামাল পাটুয়ারি বসে অলস সময় পার করছেন। পন্টুনে ওঠে তার দিকে এগুতেই বলেন, ভাই ডাব খাবেন? এ সময় তিনি মুখটা মলিন করে বলেন, আমাদের আর ব্যবসা-বাণিজ্য নাই। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই ঘাটে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ নেই। ঘাট একদমই ফাঁকা। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগেও ঘাট এলাকা জমজমাট থাকত। ঘাটে মানুষ থাকলে বেঁচা বিক্রি ভালো হয়। যাত্রীশূন্য ঘাট থাকলে আমার সংসার চলবে কেমনে?

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক প্রফুল্ল চৌহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের টিকিট বিক্রি এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে। ঘাট এলাকায় যাত্রী ও যানবাহনের চাপ নেই। যানবাহনগুলো ঘাটে এসে সরাসরি ফেরির দেখা পাচ্ছে। বর্তমানে এই রুটে ২১টি ফেরির মধ্যে ১৮টি ফেরি চলাচল করছে।

বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের ডিজিএম শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ব্যস্ততম দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় যানবাহনের সংখ্যা কমছে। আগে মহাসড়কে যানবাহন অপেক্ষা করত, এখন ঘাটে ফেরি অপেক্ষা করছে। তবে যানবাহন একদমই পার হচ্ছে না এমন না, আগে যা পার হতো এখন তার অর্ধেক পার হচ্ছে।

এই রুটে ফেরির সংখ্যা কমানো হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। কয়েক দিন যাক, তারপর ঘাটের পরিস্থিতি বোঝা যাবে। ঘাটের পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

মীর সামসুজ্জামান/এসপি