আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকার হাজী ইউনুস আলী স্কুল ও কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক উৎপলকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তার স্ত্রী বিউটি রানী নন্দী। 

তিনি বলেন, এ হত্যাকাণ্ড যে ষড়যন্ত্রমূলকভাবেই হয়েছে এটা বুঝতে পেরেছি। কারণ ষড়যন্ত্র ছাড়া একজন ছাত্র কখনও একজন শিক্ষককে এভাবে মারতে পারে না।

বুধবার (২৯ জুন) দুপুরে উল্লাপাড়া উপজেলার লাহিড়ী মোহনপুর ইউনিয়নের এলংজানী গ্রামে নিহত শিক্ষকের বাড়িতে গেলে তিনি ঢাকা পোস্টকে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, কে কে এই ষড়যন্ত্র করেছেন আমি সেটা বলতে পারব না। তবে আমি হাসপাতালে এমনটাই শুনেছি যে, তাকে মেরে ফেলাটা একটা ষড়যন্ত্র। তবে যেহেতু পুলিশ প্রশাসন আছে, পুলিশের প্রধান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছেন, আমি তাদের কাছেই এসবের বিচার চাই। ষড়যন্ত্রকারীদের সনাক্ত করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।
 
উৎপলের স্ত্রী বিউটি রানী নন্দী সেতু বিভাগে ব্যক্তিগত সহকারী পদে কর্মরত বলে জানিয়েছেন।

বিউটি রানী নন্দী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকালে উৎপল বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছে এবং দুপুরে এ ঘটনা। তারপরও কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাকে কিছুই জানায়নি। কিন্তু তাদের এটা জানানো উচিত ছিল। পরবর্তীতে বিকেলে আমার জা (উৎপলের দাদার স্ত্রী) আমাকে জানায়, যে এরকম একটা ঘটনা ঘটেছে। পরে আমি জানার পরে সন্ধ্যায় সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখি সে আইসিওতে ভর্তি আছে এবং মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। পরবর্তীতে সোমবার সকালে সে আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেল।

তিনি আরও বলেন, উৎপলকে ছাড়া আমি খুব অসহায় হয়ে পড়েছি। তাকে ছাড়া আমার এখন পথ চলাটাই বন্ধ হয়ে গেছে। আমি কি করব, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। মাত্র তিন বছর হলো আমাদের বিয়ে হয়েছে। এখনও আমাদের কোনো সন্তান হয়নি। এমতাবস্থায় আমি কি করব কিছুই জানি না। নিজেকে সান্ত্বনা দেবারও কোন ভাষা নেই। তিনি উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, কেন উৎপলকে এভাবে মেরে ফেলা হল?

উৎপলকে ছাড়া আমার জীবনটা একদম শূন্য জানিয়ে তিনি বলেন, এই যে, বাড়িতে এসেছি সবার সঙ্গে কথা বলছি সবাই আমাকে জিজ্ঞাসা করছে কিন্তু আমি কাউকে কিছুই বোঝাতে পারছি না। তার শূন্যতা আমি কীভাবে বোঝাব, এটাও বুঝতে পারছি না। আমি শিক্ষা মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার স্বামী হত্যার সঠিক বিচার চাই। আমার স্বামীকে ষড়যন্ত্র করে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে এটা আমি বুঝতে পেরেছি।

অন্যদিকে, আর্তনাত করে চলেছেন বিউটির মা ছবি রানী নন্দী। এই অল্প বয়সে মেয়েকে কোনোভাবেই বিধবা দেখতে পারছেন না তিনি। যারা মেয়ের জামাইকে হত্যা করে মেয়েটার জীবন নষ্ট করেছে তাদের দ্রুত শাস্তি চান তিনিও।

ছবি রানী নন্দী ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাত্র ৩ বছর হলো মেয়েটার বিয়ে হয়েছে। এখনো সন্তানও হয়নি। এই বয়সে মেয়েকে বিধবা বেসে কীভাবে দেখব। আমি চাই দ্রুত হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে তাকে ফাঁসি দেওয়া হোক।

অন্যদিকে, উৎপলের মৃত্যুতে কেঁদে চলেছেন প্রতিবেশীরাও। এলাকাবাসী জানান, উৎপল খুবই ভালো ছেলে ছিলেন। উৎপলের পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। নির্বাক হয়ে পড়েছেন উৎপলের মা। পরিবার ও এলাকাবাসীরও একই কথা, এভাবে মরতে পারেন না উৎপল! তাকে হারিয়ে যেন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে তার পরিবার। উৎপল নেই, পরিবারের সঙ্গে তারাও এটা বিশ্বাস করতে পারছেন না। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে গ্রামেও। তার এই অকাল মৃত্যুতে আমরা নিজেরাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারছি না। আমরা সবাই বিনয়ের সঙ্গে আবেদন করব উৎপলের হত্যাকারীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য এবং তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার জন্য। 

প্রসঙ্গত, উৎপল উল্লাপাড়া উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের এলংজানী গ্রামের মৃত অজিত সরকারের ছেলে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেন তিনি। আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকার হাজী ইউনুস আলী স্কুল ও কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে ১০ বছর ধরে কর্মরত ছিলেন। উৎপল ওই প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থীদের মানসিকতা উন্নয়নে কাজ ও শাসন করতে হয়েছে তাকে।

গত শনিবার (২৫ জুন) হাজী ইউনুস আলী স্কুল ও কলেজ মাঠে ছাত্রীদের ফুটবল খেলা চলছিল। প্রভাষক উৎপল মাঠের এক পাশে দাঁড়িয়ে খেলা দেখছিলেন। এ সময় ওই প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতু ক্রিকেটের স্টাম্প নিয়ে এসে উৎপলকে বেধড়ক পেটাতে শুরু করে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে আইসিউতে রাখা হয়। সেখানে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে সোমবার সকালে তিনি মারা যান।

এমএএস