অভাবের সংসার দীপ্তদের। পরিবারের ৫ জনের সংসার চলত বাবার ভ্যান চালানো আয়ে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে বড় সে। ৮ম শ্রেণিতে পড়ে। বাবা যেদিন অসুস্থ থাকে সেদিন ভ্যান নিয়ে বের হয় সে। ওইদিন তার ভ্যান চালানো আয়ে সংসার চলে তাদের। 

সোমবার (৪ জুলাই) সকালেও বাবার ভ্যান নিয়ে বের হয়েছিল দীপ্ত। সকালে যাত্রীবেশে দুই চোর কৌশলে তাকে নিয়ে যায় বাগেরহাট শহরে। পরে শহরের মিঠাপুকুর পাড় এলাকায় এলে ভ্যান রেখে একজন দীপ্তকে নিয়ে একটি দোকানে যায়। এই সুযোগে অপরজন ভ্যান নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পর থেকে দীপ্তর কান্না থামছে না। ভয়ে বাড়িতেও যেতে চাচ্ছে না সে।

আরও পড়ুন : নামাজ পড়তে গিয়ে রিকশা চুরি, কাঁদছেন অসহায় বৃদ্ধ

দীপ্তর বাড়ি বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার মঘিয়া ইউনিয়নের ছোট আন্ধারমানিক গ্রামে। সে স্থানীয় আন্ধারমানিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

আরও পড়ুন : সেই বৃদ্ধকে নতুন রিকশা কেনার টাকা দিলেন চরমোনাই পীর

কাঁদতে কাঁদতে দীপ্ত বলে, সকালে বাড়ির সামনে থেকে দুই যাত্রী নিয়ে কচুয়া বাজারে আসি। সেখানে এক যাত্রী নেমে গেলেও অন্য জন আমাকে সাইনবোর্ড বাজারে নিয়ে যায়। সেখান থেকে আরও এক যাত্রী ওঠে। তারা আমাকে জোর করে বাগেরহাট নিয়ে আসে। আমি এদিকে আসতে চাইছিলাম না। কিন্তু তারা আমার বাবার পরিচিত বলে আমাকে জোর করে নিয়ে যায়। বাগেরহাট শহরের মধ্যে ঘুরে তারা প্রথমে এক পাইপের দোকানের সামনে দাঁড়ায়। সেখান থেকে আমাকে নিয়ে মিঠাপুকুর পাড়ে এসে বলে ছায়ায় ভ্যান রাখতে। তারপরে একজন আমাকে নিয়ে আবার পাইপের দোকানে যায়। অপরজন ভ্যানেই থেকে যায়। পাইপের দোকানে যাওয়ার আগে ওই লোক একটি দোকান থেকে পান কিনে ভ্যানের লোকটাকে পান দিয়ে যায়। তখনই আমার সন্দেহ হয়। এসে দেখি ভ্যানও নেই, লোকও নেই। এখন আমি কি করব। কোথায় যাব। আমারে তো বাড়ি গেলেই মারবে। আর আমাদের সংসার এখন কিভাবে চলবে। এই বলে কাঁদতে থাকে দিপ্ত।

আরও পড়ুন : জুমার নামাজ পড়ার সময় ভ্যান চুরি, কান্না থামছে না চালকের

মিঠাপুকুর পাড় এলাকার একটি ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী তারক বৈরাগী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছেলেটাকে দেখি কাঁদতে কাঁদতে দৌড়াচ্ছে। আর ভ্যানের জন্য আহাজারি করছে। পরে আমরা তাকে ডেকে তার কাছ থেকে নম্বর নিয়ে ওর বাবাকে ফোন করে জানিয়েছি।

দীপ্তর বাবা দিপঙ্কর মৃধা দুপুরে বাগেরহাটে এসে সদর মডেল থানায় এ ঘটনায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি বলেন, দু'বছর আগেও অন্য একটি ভ্যান চুরি হয়ে যায়। বাড়ির পাশের রাস্তা থেকে চুরি যাওয়া সেই ভ্যানটিও আর পাওয়া যায়নি। তারপর অনেক কষ্টে সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে এই ভ্যানটি কিনেছিলাম। এই ভ্যানটাও চুরি হয়ে গেল। এখন তো পথে বসতে হবে।

বাগেরহাট মডেল থানা পুলিশের ওসি কেএম আজিজুল হক বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এই চোর চক্রকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

এর আগে গত ১৫ জুন বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে একইভাবে একটি ইজিবাইক চুরি হয়। যাত্রীবেশে চোরেরা চালক আবু বক্কর আয়াজকে (২৪) অচেতন করে তার ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকটি চুরি করে নিয়ে যায়। রামপাল উপজেলার বাইনতলা এলাকার আয়াজ ঘটনার মাত্র একমাস আগে নিজেদের গরু বিক্রির টাকা এবং ধার দেনা করা টাকা মিলিয়ে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে ইজিবাইকটি ক্রয় করেছিলেন।

তানজীম আহমেদ/এমএএস