বান্দরবানে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ছাদবাগান। বাড়ির পরিত্যক্ত থাকা ছাদগুলো এখন সবুজ হয়ে উঠেছে। এতে শৌখিনতার পাশাপাশি মিটছে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা।

জেলায় এখন অধিকাংশ পরিবার অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে ছাদবাগানে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে। কেউ পুরোনো বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে আবার কেউবা নতুন করে ফুল-ফল আর শাকসবজির বাগান করতে আগ্রহী হয়ে উঠছে।

বান্দরবান শহরের তিন তলা বাড়ির ছাদে নানা জাতের ফল ও শাকসবজির বাগান করেছেন গৃহকর্ত্রী রিমা শাহরিয়ার। নেহাত শখের বশে শুরু করেছেন তিনি। তার বাগানে এখন গাছ পাকা আম, ডালিমসহ নানা ফল তারা বাগানে শোভা পাচ্ছে। তরতাজা শাকসবজি কেটে রান্না করেন। এতে তার আনন্দ আর ধরে না।

রিমা শাহরিয়ার বলেন, তিনি মাত্র তিন বছর আগে শহরের মেম্বার পাড়ায় নিজ বাড়ির বাড়ির ছাদে বাগান করা শুরু করেন। বিভিন্ন টবে মাল্টা, আম, পেয়ারা, লেবু ও স্ট্রবেরিগাছ লাগিয়েছেন তিনি। ফলও পাচ্ছেন বেশ। এ ছাড়া লাউ, মিষ্টিকুমড়া ও টমেটোর চাষ করছেন।

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা ছাদবাগানে কাজ করেন। এতে তার ভালো লাগে। আর নিজের গাছ থেকে পাকা ফল পাড়ার আনন্দের তুলনা হয় না। সারা বছরই কোনো না কোনো সবজি হচ্ছে ছাদে। যখন-তখন তুলে আনা যাচ্ছে।

শুধু গৃহবধূ রিমা নন, আরও অনেকে ছাদবাগান করেছেন। এ শহরে ছাদে বাগান করা শৌখিন আরও অনেকের খোঁজ পাওয়া যায়। অবসর সময় ও টাটকা ফলমূল পাওয়া যায় বলে সবার কাছে তা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

আহসার আলম রমু একজন ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী। দিনের বেশির ভাগ সময় ব্যস্ত থাকেন। এর ফাঁকে তিনি বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন বাগান। তিনি বাগানে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, শসা, শিম, বরবটি, করলা, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, মরিচ, ডাঁটা, লালশাক, পুঁইশাক ও টমেটোর চাষ করছেন। এতে তার পরিবারের টাটকা ফল ও সবজির চাহিদা মিটছে।

মেম্বারপাড়ার আরেক বাসিন্দা মো. আইয়ুব তার বাড়ির ছাদে প্রথমে ফুলের বাগান করেন। গত বছর তিনি ছাদে নানা জাতের ফলের বাগানও গড়ে তোলেন। তিনি বলেন, এ বছর তার ছাদের আমগাছে আম ধরেছে। ছাদবাগানে অবসর কাটে, পরিবারের টাটকা শাকসবজির চাহিদাও মেটে।

শহরের মধ্যম পাড়ার বাসিন্দা সাবেক সংসদ সদস্য মিসেস ম্যামাচিং সাত বছর ধরে গড়ে তুলেছেন গোলাপ, বেলীসহ জাতের ফুল, বিভিন্ন জাতের ফল ও শাকসবজির বাগান।

তিনি জানান, তিনি ছাদবাগান থেকেই পরিবারের শাকসবজির চাহিদা মেটান। ছাদবাগান পরিচর্যা করার কারণে এটা তার নিয়মিত ব্যবয়ামের মতো হয়েছে বলে জানান।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক বলেন, বিভাগীয় শহরে ছাদবাগান করার জন্য কৃষি বিভাগ থেকে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হলেও জেলা পর্যায়ে এখনো দেওয়া হচ্ছে না। তবে আমরা প্রস্তাব পাঠিয়েছি। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ছাদবাগানে পর্যাপ্ত সহায়তা দেওয়া হলে এই বাগান পরিবারের খাদ্যচাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এলাকার কৃষি ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তিনি আরও বলেন, শহরে বাগান করার মতো জায়গা থাকে না। তাই ছাদে বাগান করার ব্যাপারে আমরা বাড়ির মালিকদের উৎসাহিত করছি। ছাদে প্রচুর আলো-বাতাসের কারণে গাছ সজীব থাকে। তাদের বছরে একবার বাগানের মাটি পরিবর্তন করার পরামর্শ দিচ্ছি। এখন ছাদের বাগান মফস্বল শহরগুলোতেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

এনএ