আগের মতো কায়ো এ্যলা শিলপাটা ব্যবহার করে না। মাইনষে এ্যলা দামি দামি ব্লেন্ডার মেশিন দিয়ে মসলা গুঁড়া করে। হামার আর আগের মতো কামাই নেই। ওই তকনে হামার মতো গরিবের ঘরোত কোনো ঈদ আনন্দ নাই। এভাবেই বলছিলেন শিলপাটা খোদাইকারক দয়াল মিয়া। শনিবার (৯ জুলাই) দুপুরে নগরীর শাপলা চত্বর পিডিবি গলিতে দেখা হয় তার সঙ্গে। 

রংপু‌র নগরীর লালবাগ কে‌ডি‌সি রো‌ডে প‌রিবার প‌রিজন নি‌য়ে থাকেন দয়াল। বয়স চ‌ল্লিশ হ‌লেও দা‌রি‌দ্রের কষাঘা‌তে তার চেহারায় পড়েছে বার্ধ‌ক্যের ছাপ। কথা‌তেও স্পষ্ট এখন আর তা‌দের তেমন কদর নেই। 

ঈ‌দের ম‌তো বড় উৎসবগু‌লোতে অ‌নে‌কেই শিলপাটায় ধার দি‌য়ে থা‌কেন। এ সময়টাতে কিছুটা বাড়‌তি আ‌য়ের সু‌যোগ পেয়ে থাকেন দয়ালের মতো শিলপাটা খোদাইশিল্পীরা। 

একসময় পাড়া-মহল্লায় সর্বত্র শিলপাটা ধার কাটার ছন্দময় সুরের স‌ঙ্গে প‌রিচয় ছি‌লে না এমন মানুষ কমই পাওয়া যা‌বে। ‌শিলপাটার ধার খোদাইকারকরা মহল্লা থে‌কে মহল্লায় ছু‌টে চ‌লতে গৃহস্থলীর বি‌শেষ এই পণ্য ধার দেওয়ার কা‌জে। ছোট্ট ব্যাগে হাতু‌ড়ি আর ছেনি নি‌য়ে চির‌চেনা সেই ডাক- "‌শিলপাটা ধার করা‌বেন, শিলপাটা ধার?" 

দীর্ঘদিন পর হঠাৎ এমন হাঁক ডাক শুনে মনে পড়ে গেল পুরনো দিনের কথা। এখন আর তেমনভা‌বে শোনা বা দেখা যায় না দয়ালদের।

এনিয়ে কথা হয় নগরীর শাপলা চত্বর পিডিবি গলির বাসিন্দা শান্তনু জামানের সঙ্গে। কারুনীড় নামে পোশাক তৈরি প্রতিষ্ঠানের এই উদ্যোক্তা ঢাকা পোস্টকে জানান, নতুন প্রজ‌ন্মের কা‌ছে শিলপাটা বিষয়টা অজানা। আধু‌নিক প্রযু‌ক্তির কল্যাণে মসলা বাটার (‌পেস্ট) শিলপাটার এ জায়গাটি দখল ক‌রে নি‌য়ে‌ছে ব্লেন্ডার নামক মে‌শিন‌ এবং রেডি‌মেইড প্যা‌কেটজাত গুঁড়া মসলা। এ কারণে আগের মতো এখন শিলপাটার খোদাইশিল্পীদের দেখা যায় না। ঈ‌দের সময়ে দেখা মিললেও এদের আর আগের মতো কাজ নেই।

তিনি আরও বলেন, একটা সময় এই উপমহা‌দে‌শে শিলপাটা ‌ছি‌লে যেমন রন্ধন‌শি‌ল্পের এক অপ‌রিহার্য উপকরণ। তেম‌নি এর ধার করার বিষয়‌টিও ছি‌লে এক ধরনের শিল্প। খোদাইকার‌কের নিখুঁত হা‌তের ছোঁয়ায় হাতুর আর ছে‌নি দি‌য়ে পাথ‌রের তৈ‌রি পাটার ওপ‌রে নানা লতাপাতা, ফুল, মাছ, আলপনার নকশা শো‌ভিত হ‌তো। এখন আর দেখা যায় না। এ‌টি এখন আর শিল্প নেই, নিছক একটা প্রয়োজন। সে‌টিও আজ টি‌কে থাকা না থাকার মা‌ঝে দোদুল্যমান।

এদিকে খোদাইশিল্পী দয়াল মিয়া জানান, গ্রামাঞ্চলে এখনও পরিবারে শিলপাটায় মসলা বাটা হয়ে থাকে। শহরে এমন পরিবারের সংখ্যা খুবই কম। এছাড়া হোটেল, রেস্তোরাঁ ও ডেকোরেটর প্রতিষ্ঠানগুলোর রন্ধনশিল্পীরা শিলপাটায় মসলা বেটে থাকেন। শিলপাটায় বাটা মসলায় আলাদা স্বাদ ও ঘ্রাণ থাকে, যা রান্নার গুণগত মান বাড়িয়ে দেয়।

বর্তমানে আকারভেদে একেকটি শিলপাটা খোদাই করে ৩০-১৫০ টাকা পর্যন্ত নেন দয়ালরা। কেউ যদি শিলপাটায় লতাপাতা, ফুল, মাছ, আলপনা করে নেন, তাহলে একটু বেশি সময় লাগে। তবে আগের মতো চাহিদা না থাকায় দয়ালের মতো অন্য খোদাইশিল্পীদের অবস্থাও ভালো নেই বলে জানান তিনি।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস