পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ঈদ পরবর্তী ‌১২ ঘণ্টার আগেই কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক)। নগরবাসীর সার্বিক সহায়তা ও রসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে বর্জ্য অপসারণ সম্ভব হয়েছে। এ জন্য নগরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহমুদুর রহমান টিটু।

সোমবার (১১ জুলাই) দুপুরে ঢাকা পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, বর্জ্য অপসারণে আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম ২৪ ঘণ্টা সময় লাগবে। কিন্তু পূর্ব অভিজ্ঞতা ও পরিকল্পনার ছক কষে তা কমে ১২ ঘণ্টা ধরা হয়। পরে সেই টার্গেট নিয়ে আমরা কাজ করেছি। ঈদের সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় ২০০ টনের বেশি বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। এর জন্য সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ১ হাজার ৪২ জন পরিচ্ছন্নকর্মী নিরলসভাবে কাজ করেছেন।

ভারপ্রাপ্ত মেয়র বলেন, কোরবানির পশুর বর্জ্য থেকে যাতে দুর্গন্ধ না ছড়ায়, এ জন্য নগরের রাস্তায় রাস্তায় ও অলিগলিসহ পশু জবাই করে রাখা স্থানগুলোতে পর্যাপ্ত ব্লিচিং পাউডার ছিটানো হয়েছে। ঈদের দিনে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বর্জ্য সংগ্রহ করেছে। মূলত ১২ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যেই প্রথম দিনের বর্জ্য অপসারণ হয়েছে। পুরো নগরজুড়ে ১২৫টি ট্রলি ও রিকশাভ্যান এবং ৩০টি ট্রাকে বর্জ্য সরানো হয়েছে। এ ছাড়া ঈদের দ্বিতীয় দিনেও কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে কর্মীরা কাজ করছেন।
  
টিটু আরও জানান, কোরবানির পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণে নগরের ৩৩টি ওয়ার্ডকে তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছিল। কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলরবৃন্দসহ সিটির কর্মকর্তারা পুরো কার্যক্রমের তদারকি করছেন। তবে নগরবাসীর আন্তরিকতা, সচেতনতা ও সহযোগিতার কারণে দ্রুত সময়ের মধ্যে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ সম্ভব হয়েছে। এ জন্য নগরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এই মেয়র।

সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানে অধিকাংশ পশু জবাই হয়নি স্বীকার করে তিনি বলেন, আমরা ১১৭টি স্থানে পশু কোরবানির স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছি। নির্ধারিত স্থানে কোরবানি করতে নগরবাসীকে অবগত করে প্রচার-প্রচারণাও চালানো হয়েছে। তবে স্বল্প সংখ্যায় হলেও নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবাইয়ের যে রীতি চালু হয়েছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে নগরবাসী তাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে বলেও জানান মাহমুদুর রহমান টিটু।

অন্যদিকে রসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মাহাবুবার রহমান মঞ্জু বলেন, ঈদের দিন সকাল থেকেই পাড়া-মহল্লায় বাড়ি বাড়ি আমাদের পরিচ্ছন্নকর্মীরা ট্রলি ও ভ্যান নিয়ে কোরবানির বর্জ্য সংগ্রহ করেছেন। শুধু তাই নয়, নগরের প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে জবাইকৃত স্থান থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে ট্রলি, রিক্সাভ্যান ও ময়লা বহনকারী ট্রাকে করে নির্দিষ্ট ডাস্টবিন ও নির্ধারিত স্থানে ডাম্পিং করা হয়। পরে বর্জ্য অপসারনের জন্য রাত ১২টা পর্যন্ত নগরের কলাবাড়ী, নাসনিয়া ও শরেয়ারতল এলাকায় ডাম্পিং পয়েন্টে নিয়ে যাওয়া হয়। ইতোমধ্যে ওয়ার্ড কাউন্সিলররা তাদের নিজ নিজ ওয়ার্ড বর্জ্যমুক্ত ঘোষণা করেছেন।

প্রসঙ্গত, ঈদের দিন বেলা ২টার সময় নগরের শাপলা চত্বরে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্যানেল মেয়র-১ সামছুল হক। এতে ১২ ঘণ্টার আগেই বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এ সময় রসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদ হাসান মৃধা, কাউন্সিলর মাহবুবার রহমান মঞ্জু, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখার তিন জোনের প্রধান মিজানুর রহমান মিজু, হাসান রাহি, শাহিনুর রহমান শাহিনসহ সিটির অন্যান্য কর্মকর্তা, কর্মচারী ও স্থানীয়রা উপস্থিত ছিলেন।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই