উজানের ঢল আর অতিবৃষ্টিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাঁচ উপজেলায় সৃষ্ট বন্যায় কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। টাকার অংকে এ ক্ষতির পরিমাণ ১১৯ কোটি টাকারও বেশি। পানিতে সব হারিয়ে দিশেহারা ৯০ হাজারেরও বেশি কৃষক। ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে জমি থেকে পানি সরে যাওয়ার পর সরিষাসহ অন্যান্য ফসল আবাদে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উজানের ঢল ও অতিবৃষ্টিতে গত ১৮ জুন থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, আখাউড়া, বিজয়নগর, সরাইল ও নাসিরনগর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বন্যা দেখা দেয়। ১০ দিনের ওই বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়ে অন্তত সাড়ে ৬ হাজার পরিবার। তবে ঘরবাড়ি থেকে বন্যার পানি সরে গেলেও এখনো নিচু এলাকার ধানের জমি ও সবজি ক্ষেতগুলো তলিয়ে আছে পানিতে। গোড়া পচে যাওয়ায় নষ্ট হয়ে গেছে ১৪ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমির আউশ, বোনা আমন ও বিভিন্ন সবজি। আয়ের একমাত্র উৎস পানিতে হারিয়ে এখন ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের সহযোগিতা চাইছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, বন্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, নাসিরনগর, বিজয়নগর, আখাউড়া ও সরাইলে ৪ হাজার ৭৫০ হেক্টর আউশ ও ৯ হাজার ৩৬ হেক্টর বোনা আমন এবং ৪৯৫ হেক্টর জমির সবজি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১১৯ কোটি টাকারও বেশি।

সদর উপজেলার রামরাইল ইউনিয়নের ঘাটিয়ারা গ্রামের কৃষক শাহীন মিয়া জানান, বাড়ির পাশে ১২০ শতাংশ জমিতে প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ করে মরিচ, শসা ও চিচিঙ্গাসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেছিলেন তিনি। আর কিছুদিন পরেই ফলন আসত গাছে। কিন্তু আকস্মিক বন্যার পানিতে সব সবজিক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ঘুরে দাঁড়াতে সরকারি সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

আরেক কৃষক রহমত আলী জানান, ৬০ শতাংশ জমিতে আউশ ধান লাগিয়েছিলেন। মাস দেড়েক পর জমির ধান কাটবেন বলে আশা করেছিলেন তিনি। কিন্তু বন্যার কারণে তার সব জমিতে পানি উঠে। ফলে গোড়া পচে যাওয়ায় ফলন আসার আগেই সব ধানের চারা নষ্ট হয়ে গেছে।

জমি থেকে পানি সরে যাওয়ার পর ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে কৃষকদের বীজতলার পাশাপাশি সরিষা চাষে উদ্বুব্ধ করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার রামরাইল ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান জানান, রামরাইল ইউনিয়নে ধানের পাশাপাশি সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জমিতে সরিষাসহ অন্য ফসল চাষে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পানি সরে যাওয়ার পর থেকে জমিগুলোতে অন্য ফসলের আবাদ করে কিছুটা হলেও ক্ষতি পোষানো যাবে বলে জানান তিনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা জানান, বন্যার কারণে কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে- যেন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়।

আরএআর