ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়ায় মারধর, সমাজসেবা কর্মকর্তার অডিও ফাঁস
নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত মামলার তদন্তের জন্য নেওয়া ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়ায় রংপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের কার্যালয়ে এক বৃদ্ধ ও তার ছেলেকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত আফসার আলী ও তার ছেলে শাহিন মিয়াকে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গত বুধবার (১৩ জুলাই) বিকেলে সদর উপজেলা পরিষদের সমাজসেবা অফিসারের কার্যালয়ের কর্মকর্তা শিখা রাণী রায়ের দপ্তরে এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর ভুক্তভোগী পরিবারটি সমাজসেবা কর্মকর্তা শিখা রাণী রায়ের ঘুষ চাওয়া সংক্রান্ত কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ গণমাধ্যমকর্মীদের সরবরাহ করেছেন। যদিও মারধর করাসহ ঘুষ চাওয়ার অডিওর বিষয়টি অস্বীকার করছেন ওই সমাজসেবা কর্মকর্তা।
বিজ্ঞাপন
ঘুষের টাকা চাওয়ায় অডিও ক্লিপটি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে জেলা ও বিভাগীয় সমাজসেবা অধিদপ্তর। এরই মধ্যে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। শোকজ করা হয়েছে ওই সমাজসেবা কর্মকর্তাকে।
এদিকে মামলার বাদী গৃহবধূ আফসানা মিমি জানান, চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-১ এ স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক দাবি ও ভ্রুণ হত্যার অভিযোগে একটি মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য রংপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শিখা রাণী রায়কে নির্দেশ দেন আদালত। দীর্ঘ পাঁচ মাস তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য ধরনা দিলেও শেষে শিখা রাণী রায় তাদের কাছে ঘুষ দাবি করেন। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে আফসানা মিমির দরিদ্র বাবা আফসার আলী কষ্ট করে ১০ হাজার টাকা জোগাড় করে দেন। কিন্তু বুধবার (১৩ জুলাই) আদালতে বিপক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করায় বিকেলে টাকা ফেরত নিতে উপজেলা পরিষদে গেলে আফসার ও তার ছেলে শাহিনকে বেধড়ক মারপিট করে তাড়িয়ে দেন শিখা রাণী রায় ও তার অফিসের কর্মচারীরা।
বিজ্ঞাপন
এদিকে ভুক্তভোগী পরিবারের কাছে ঘুষ চাওয়া সংক্রান্ত ৪৪ সেকেন্ডের একটি অডিও রেকর্ড ঢাকা পোস্টের এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। তাতে একজন পুরুষ আফসানা মিমির বাবা পরিচয়ে কবে তদন্ত রিপোর্ট দেবেন জানতে চাইলে একজন নারী কণ্ঠে বলছেন, ‘যত তাড়াতাড়ি আমাদের সন্তুষ্ট করতে পারবেন, তত তাড়াতাড়ি রিপোর্ট পাবেন।’
একই অডিওতে পুরুষ কণ্ঠে আবার বলা হয়, ‘যে ১০ হাজার দিয়েছি, তা দিয়েই কাজটা করে দেন। তখন নারী কণ্ঠে বলা হয়, ‘দেখি অফিসে গিয়ে আগে কথা বলি।’
এ ব্যাপারে শিখা রাণী রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। একই সঙ্গে তার কার্যালয়ে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলেও দাবি করেছেন।
ঘুষের টাকা চাওয়ার অডিও প্রসঙ্গে রংপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শিখা রানী বলেন, টাকা-পয়সা সংক্রান্ত কোনো কথা আমি বলিনি। আপনারা অডিওটি ভালো করে শুনবেন। মামলা তদন্ত সংক্রান্ত কথাবার্তা হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবার থেকেই টাকা দিতে চেয়েছিল।
এদিকে রংপুর সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল মতিন বলেন, ঘটনাটি শোনার পর তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে প্রাথমিকভাবে অভিযোগটির সত্যতা পাওয়া গেছে। এ কারণে ওই কর্মকর্তাকে শোকজও করা হয়েছে। এ ঘটনায় আমাদের প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর