জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিবেশীকে ফাঁসাতে ছেলে ও ভাতিজার পরিকল্পনায় ঘুমন্ত অবস্থায় গিয়াস উদ্দিন (৬০) নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ময়মনসিংহের পাগলা থানার কোকসাইর এলাকার কেরামত আলীর ছেলে মো. আলম (৩৮), ত্রিশাল উপজেলার কুষ্টিয়া এলাকার মো. আবু কালামের ছেলে মো. আরাফাত (২৬)। 

সোমবার (১৮ জুলাই) রাত দেড়টার দিকে ময়মনসিংহের পাগলা থানাধীন কোকসাইর এলাকা থেকে মো. আলমকে এবং মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) ভোর ৫টার দিকে গাজীপুরের শ্রীপুর থানাধীন কেওয়া এলাকা থেকে মো আরাফাতকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গাজীপুর পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. হাফিজুর রহমান জানান, ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় গিয়াস উদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার ভাংনাহাটি পশ্চিমপাড়া নতুন বাজার গ্রামের মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে। তিনি তার বাড়ির সামনের রাস্তার পাশে গ্যারেজে অটোরিকশা চার্জসহ গাড়ি রাখতেন। অটোরিকশা তৈরিসহ ক্রয়-বিক্রয় করতেন। গিয়াস উদ্দিন গ্যারেজের ভেতর এক পাশে কাঠের চৌকির ওপর প্রতিদিন রাতে ঘুমাতেন।

প্রতিদিনের মতো ঘটনার দিন ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর গিয়াস উদ্দিন ওই গ্যারেজে রাতে ঘুমিয়ে পড়েন। পর দিন ১২ ডিসেম্বর সকালে গ্যারেজের ভেতরে ঘুমিয়ে থাকা কাঠের চৌকির ওপর গিয়াস উদ্দিনকে মাথায় জখমপ্রাপ্ত অবস্থায় পেয়ে পরিবারের সদস্যরা শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মো. অলিউল্লাহ বাদী হয়ে ওই দিনই শ্রীপুর থানায় মামলা করেন।

শ্রীপুর থানা পুলিশ তদন্ত করার পর মামলাটি গাজীপুর পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দীর্ঘ সময় তদন্ত করে মো. আলম ও আরাফাতের সম্পৃক্ততা পায় পিবিআই। পরে তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। 

গ্রেপ্তারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানান, গিয়াস উদ্দিনের গ্যারেজে অটোরিকশা রাখতেন গ্রেপ্তারকৃত মো. আলম ও আরাফাত। ঘটনার রাতে গিয়াস উদ্দিনের ছেলে আবুজর (৩২) ও ভাই মো. সিরাজের ছেলে সবুজের (৩২) সঙ্গে গিয়াস উদ্দিনের পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় মো. সাহাবুদ্দিনের বিরোধ রয়েছে। সাহাবুদ্দিনকে ফাঁসাতে গ্রেপ্তারকৃতরা আবুজর ও সবুজের পরামর্শে গিয়াস উদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। ঘটনার দিন গ্রেপ্তার আলমকে ফোনে ডেকে নিয়ে আবুজর, সবুজ, আরাফাতসহ অন্যরা ঘটনাস্থলের পাশের দোকানে বসে চা পান করেন। পরে সকলে একত্রিত হয়ে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গ্যারেজে ঢুকে ঘুমন্ত অবস্থায় গিয়াস উদ্দিনকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন।

এ বিষয়ে গাজীপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। মূলত ভিকটিমের ছেলে আবুজর এবং ভাতিজা সবুজ তাদের সহযোগীদের সঙ্গে পরিকল্পনা করে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিবেশী প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য ঘটনার রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় ভিকটিমকে কুপিয়ে হত্যা করে। পিবিআইয়ের হেফাজতে থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তারকৃত মো. আলম ও মো. আরাফাত প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গিয়াস উদ্দিন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। পরে তাদের মঙ্গলবার গাজীপুর আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা নিজে এবং ঘটনায় জড়িত অপর আসামিদের নাম প্রকাশ করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। 

শিহাব খান/আরএআর