পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট না দিলে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না আসার জন্য বলেছেন আওয়ামী লীগের এক নেতা।

গত বৃহস্পতিবার নাজিরপুর ইউনিয়নের সুলতানাবাদে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ইব্রাহিম ফারুকের উঠান বৈঠকে বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশে এ কথা বলেন বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি তালুকদার মো. জাহাঙ্গীর।

ইতোমধ্যে তার এই বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা। এ নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে কাজ করছে আতঙ্ক।

ওই ভিডিও ক্লিপের বক্তব্যে তালুকদার মো. জাহাঙ্গীরের বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘এখানে আমরা যারা আছি, আমরা সবাই চিন্তা-চেতনায় ঐক্যবদ্ধ ইব্রাহিম ফারুককে নৌকায় ভোট দেব। তবে আমাদের একটা দুর্বলতা আছে, আমার অনেক বিএনপির বন্ধুরা আছে এই এলাকায়, আপনাদের কিন্তু কখনো বলিনি আপনারা বিএনপি করবেন না বিএনপি করতে পারবেন না কোনো দিন বলিনি। কোনো নির্বাচনেও না নির্বাচন ছাড়াও বলিনি। আমার ওই সব ভাইদের কাছে একটা প্রশ্ন আছে, আপনাদের দল বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে। যেহেতু বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে, আপনি যদি সেই দলের সমর্থক হন, তাহলে আপনিও তো নির্বাচন বর্জন করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আর যদি মনে করেন নৌকা প্রতীকে আদৌ ভোট দেবেন না, ইব্রাহিম ফারুককে (নৌকার প্রার্থী) হারাতে হবে, নৌকাকে ঠেকাতে হবে, তাহলে আমিও কিন্তু একটা কথা আপনাদের পরিষ্কার বলে রাখি, সময় আছে মাত্র তিন থেকে চার দিন। পরিষ্কার ভাষায় এ কথা বলতে চাই, যেসব বন্ধু নৌকায় ভোট দেবেন না বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন, আপনাদের আমরা ভোটের দিন কেন্দ্রের কাছাকাছি দেখতে চাই না। কোনো বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করলে পরিণতি হবে ভয়াবহ।’

এ সময় বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রার্থী ইব্রাহিম ফারুক, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. হারুন অর রশিদ খানসহ আওয়ামী লীগের অন্য নেতারা।

এদিকে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন বক্তব্য সাধারণ ভোটাররা আতঙ্কগ্রস্ত জানিয়ে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী এস এম মহসীন বলেন, একটি উঠান বৈঠকে নৌকার ভোটার ছাড়া অন্য ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া মানে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা। নির্বাচনের শুরু থেকেই আমাকে নির্বাচন বর্জন করা ও এলাকায় না থাকার জন্য প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি তালুকদার মো. জাহাঙ্গীরকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন না ধরায় তার বক্তব্য পাওয়া জায়নি।

বাউফল উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. তারিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ ধরনের কোনো বক্তব্য দিয়েছি কি না, আমার জানা নেই। আগামী ২৭ জুলাই অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য আমরা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এখন নির্বাচনের কেন্দ্রের এজেন্টদের ইভিএমের প্রশিক্ষণ চলছে।

প্রসঙ্গগত, গত ৭ ফেব্রুয়ারি সপ্তম ও শেষ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপ) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে নাজিরপুর ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো. আমির হোসেন ব্যাপারী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি শপথ নেওয়ার আগেই ১৯ ফেব্রুয়ারি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

একই ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. মিজানুর রহমান ৩ মার্চ মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে মারা যান। এ কারণে ওই শূন্য দুটি পদে উপনির্বাচন হচ্ছে। আগামী ২৭ জুলাই উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে। মোট ছয়জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য পদে দুজন প্রার্থী লড়ছেন।

এনএ