বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাস বলেছেন, অনেক দিন আগে আমরা হায় হায় কোম্পানির নাম শুনেছিলাম। যারা না কি মানুষের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে এক সময় পালিয়ে যেত। আজ দেশের অবস্থা হায় হায় কোম্পানির মতো হয়ে গেছে। দেশকে হায় হায় কোম্পানিতে পরিণত করেছে আওয়ামী লীগ।

সোমবার (২৪ জুলাই) দুপুরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ও ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) যৌথ উদ্যোগে বন্যাদুর্গত মানুষদের জন্য ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, বিনামূল্যে ঔষধ প্রদান ও দরিদ্রদের মাঝে কাপড় বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, আজ সারা দেশের কোথাও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক নেই। আওয়ামী লীগ জনগণকে বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা বলে কুইক রেন্টালের নামে তাদের দলীয় লোকদের ধনি করতে দেশের টাকা লুটপাট করেছে। ডিজেলের জন্য অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এখন বন্ধ রয়েছে, আর ৩৭টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে উৎপাদন না করলেও তাদেরকে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ৩৪ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বিদ্যুতের কোনো খবর নেই।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সেক্টরে এই লুটপাট না হলে আজ বানভাসি মানুষকে পুনর্বাসন করা যেত। দেশে ডিজেল নেই, বিদ্যৎ নেই। শুধু নেই আর নেই। দেশে আজ কিছুই নেই। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের লুটপাটের কারণে দেশের মধ্য আয়ের মানুষরা আজ নিম্ন আয়ের মানুষে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বেসামাল লুটপাট করে দেশকে আজ হায় হায় কোম্পানিতে পরিণত করেছে। এই দেশ একদিন এভাবেই শেষ হয়ে যাবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক এই মন্ত্রী আরও বলেন, স্মরণকালের এই ভয়াবহ বন্যায় পুরো সিলেটজুড়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের সব নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে ছিলেন। আজ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কোনো নেতা বা সংগঠন মানুষের চিকিৎসার জন্য আসে নাই। সিলেটের কৃতি সন্তান ডা. জোবায়দা রহমান দেশ এবং দেশের মানুষকে ভালোবাসেন। এ জন্য সুদুর লন্ডনে থেকেও বার বার নিজ এলাকার মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বন্যার সময় ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন। এখন বন্যা পরবর্তী সময়েও মানুষদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রী আমানউল্লাহ আমান বলেন, বন্যা শুরু হওয়ার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান সব সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থগিত করে দিয়ে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন। এরপর দলের স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে সব অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্র থেকে শুরু করে সব স্থরের নেতা-কর্মীরা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ জনগণের পাশে না দাঁড়িয়ে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের নামে গান-বাজনা ও আলোকসজ্জা করে জনগণের শত শত কোটি টাকা নষ্ট করেছে।

তিনি আরও বলেন, সিলেটের কৃতি সন্তান ইলিয়াস আলী আজ কোথায়? এর উত্তর সরকার প্রধানের জানা আছে। ইলিসাস আলীকে গুম করে রাখার কারণ হচ্ছে ইলিয়াস আলী জনগণের পক্ষে কথা বলতেন। এটি আওয়ামী লীগের পুরাতন স্টাইল। তারা দেশে বাকশাল কায়েম করে মানুষের বাক স্বাধীনতা হরণ করে ছিল। তারা রাতের আধারে বিরোধী দলের ৪৫ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছিল। তাদের পাতানো নির্বাচনে কেউ যায়নি। 

আওয়ামী লীগের স্টাইলে নির্বাচনে যাওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ভোটারবিহীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধিনে দেশে আর কোন নির্বাচন হবে না। দেশে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধিনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য প্রয়োজন হলে হাজার হাজার নেতাকর্মী জীবন দেবে। ইনশাআল্লাহ সিলেটের এই পবিত্র মাটি থেকেই আওয়ামী লীগের পতন শুরু হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানি বলেন, সরকারের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়ক তারেক রহমান আপনাদের পাশে আসতে পারেননি। তাদের নির্দেশেই বিএনপি আপনাদের পাশে আছে। বন্যা পরবর্তী সময়ে আপনাদের সুচিকিৎসার জন্য দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে এবং সিলেটের কৃতি সন্তান ডা. জোবায়দা রহমানের তত্ত্বাবধানে আজ জেডআরএফ ও ড্যাব পাশে দাঁড়িয়েছে। বন্যায় আওয়ামী লীগ জনগণের পাশে দাঁড়ায়নি, কারন তারা লুটপাটে ব্যস্ত। তাই বিএনপি দেশবাসীর প্রতি দায়িত্ববোধ থেকেই অতীতের মতো জনগণের পাশে রয়েছে।

ড্যাবের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে জেডআরএফ এর মনিটর ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম ও জেডআরএফ এর সদস্য ড. খায়রুল ইসলাম রুবেলের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রী আমানউল্লাহ আমান, ড. এনামুল হক চৌধুরী, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানি, ড্যাবের মহাসচিব ডা. আব্দুস সালাম, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, স্বাস্থ বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী, ড্যাবের সহসভাপতি ও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প উপকমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. সিরাজুল ইসলাম, সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, সিলেট মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মিফতাহ্ সিদ্দিকী প্রমুখ।

মাসুদ আহমদ রনি/আরআই