৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে ঘাটে ফিরেছে ফিশিং বোট এমভি আরাফ-৩। এক বোটে মিলল ১০২ মণ ইলিশ। নিলামে বিক্রি হয়েছে ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বুধবার (২৭ জুলাই) সকাল ১০টায় হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাটের মেঘনা ফিশিংয়ে এসব ইলিশ বিক্রি করা হয়।

মেঘনা ফিশিংয়ের ম্যানেজার মো. হাবিব ভূইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২১ জন জেলে মাছগুলো তিন দিনে ধরেছে। আজ সকালে বোটটি চেয়ারম্যান ঘাটে এসেছে। বিভিন্ন সাইজের মাছ ছিল। তবে বড় সাইজের ইলিশ মাছ বেশি ছিল। নিলামে দাম তুলতে তুলতে শেষ পর্যন্ত ১০২ মণ ইলিশের দাম হয়েছে ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

তিনি আরও বলেন, হাতিয়ার জেলেরা গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যায় কিন্তু তাদের ঘর-বাড়ি নদীতে ভেঙে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি ব্লকের ব্যবস্থা করেন, তাহলে এই জেলেরা দেশের অর্থনীতিতে ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে। জেলেদের জন্য এই এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী নিজ টাকায় চেয়ারম্যান ঘাট মৎস্য আড়ৎ নির্মাণ করেছেন।

বোটটির সারেং মো. জহির ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেঘনা নদীতে ইলিশ কম। তাই গভীর সমুদ্রে গিয়েছি মাছ ধরতে। সেখান থেকে আসতে আমাদের ১৩ ঘণ্টা সময় লেগেছে। মাছগুলো আকারে বড় হয়েছে। দামও ভালো পেয়েছি।

চেয়ারম্যান ঘাটে ঘুরতে আসা নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. আশরাফুল ইসলাম আরিফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা। নোয়াখালীতে পড়ালেখা করার জন্য এসেছি। মেঘনার ইলিশ এখন প্রায় সবখানে পাওয়া যায়। একসঙ্গে ১০২ মণ তাজা ইলিশ দেখে আমার ভালো লেগেছে।

চেয়ারম্যান ঘাটে মাছ বোট থেকে আড়তে আনার কাজ করেন মো. রাকিব। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এতদিন নিষেধাজ্ঞা ছিল, তাই সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে পারেনি জেলেরা। আমাদেরও কাজ ছিল না। আমরা ৬৫ জন লোক আছি, মাছ টানার কাজ করি। এখন মাছ পাওয়া যাচ্ছে। আমরা এতেই খুশি।

হাতিয়া মৎস্য সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাতিয়া উপকূলের ৫০০ ফিশিং বোট সাগরে মাছ আহরণ করে। এক সপ্তাহ ধরে নদীতে অনেক মাছ ধরা পড়ছে। আগে এই উপকূলে মাছ শিকারে গেলে ডাকাতের কবলে পড়ত জেলেরা। কিন্তু বর্তমানে ডাকাত নেই। জেলেরা নির্বিঘ্নে মাছ ধরতে পারছে। সামনে ভরা মৌসুমে নদীতেও অনেক মাছ পাওয়া যাবে।

হাতিয়া মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আখতার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকাল ৯৯ মণ মাছ পেয়েছে একটি বোট। আজ ১০২ মণ পেল আরেকটি বোট। প্রতিনিয়ত সমুদ্রে যাওয়া বোটগুলো ঘাটে আসছে। নিষেধাজ্ঞার পর এত মাছ একসঙ্গে পেয়ে জেলেরা যেমন খুশি, ব্যবসায়ীরাও খুশি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪০ হাজারের বেশি। এছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে আমাদের মোহনায় মাছ ধরতে জেলেরা আসে। ইলিশ শিকার করে জেলেরা ফিরতে শুরু করেছে। আমরা খুব ভাগ্যবান কারণ এই মোহনার পানি স্বাদু ও সামুদ্রিক পানি মিশ্রিত। যা ইলিশের জন্য খুব ভালো।

হাসিব আল আমিন/এসপি