পাবনায় চলতি মৌসুমে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না কৃষকরা। ফলে সোনালী আঁশ খ্যাত ফসল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন প্রান্তিক চাষিরা। পাট জাগ দিতে না পারায় অনেকে পাট কেটে জমিতেই রেখে দিচ্ছেন, জমিতেই শুকিয়ে যাচ্ছে। 

পাবনা সদর, সুজানগর, ঈশ্বরদী, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে পাটচাষিদের এমন দুর্দশা দেখা গেছে। অনাবৃষ্টির কারণে জমির কাছাকাছি জলায়শয়ের পানিও শুকিয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রচণ্ড তাপে পাটগাছ পুড়ে যাওয়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে। রাস্তার পাশে পাট রেখে দিলেও পানির অভাবে জাগ দিতে পারছেন না কৃষকরা।

পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলার ৯ উপজেলার ৪০ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এখান থেকে ১ লাখ টনের বেশি পাট উৎপাদন হওয়ার কথা রয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর পাটের দাম ভালো পাওয়ায় পাবনার ৯ উপজেলায় এ বছর রেকর্ড পরিমাণ জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। সঠিক পরিচর্যার কারণে পাটের উৎপাদন বেশ ভালো। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষি। অনেকের পাট জমিতেই শুকিয়ে যাচ্ছে। ৬/৮শ টাকা করে দিয়েও শ্রমিক মিলছে না।

কৃষি বিভাগ চাষিদের ছোট ও অল্প পানিতে পাট প্রক্রিয়াকরণে রিবন রেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু কৃষক সেদিকে ঝুঁকছেন না। এখন পাট কাটা, জাগ দেওয়া আর পাটের আঁশ ছাড়ানো ও ধোয়ার কাজ চললেও অধিকংশ কৃষক পানির অভাবে পাট কাটতেই পারছে না। 

পাবনার সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নের কামারডাঙ্গা গ্রামের কৃষক তোফাজ্জল প্রামানিক বলেন, গত বছর পাটের ভালো দাম পাওয়ায় এবার বেশি করে পাট রোপণ করেছি। গত বছর ৭ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করলেও এবার ১১ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। কিন্তু পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারব না বলে জমিতেই রয়েছে। অনেক জমির পাট মরে যাচ্ছে। তারপরও কিছু করার নেই। ভরা মৌসুমে পানির দেখা নেই। বৃষ্টিও হচ্ছে না। পাট নিয়ে চরম বিড়ম্বনার মধ্যে আছি। 

শহিদুল্লাহ নামে আরেক কৃষক বলেন, এবার পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়নি। বর্ষার পানিও বিলে আসেনি। ফলে পাট জাগ দিতে না পারায় আমরা বিপাকে পড়েছি। পাটের রং খারাপ হলে দামও কম মেলে।

পাবনা সদরের চরতারাপুর ইউনিয়নের আব্দুল করিম বলেন, এ বছর ৫ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছি। কিন্তু আশপাশের কোথাও জাগ দেওয়ার মতো পানি না থাকায় ২ বিঘা জমির পাট কেটে তা আরও প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরের একটি জলাশয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে। এতে করে পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। বেড়েছে শ্রমিকের মজুরি খরচও।

মাহতাব উদ্দিন বলেন, জাগ দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ায় ৩ বিঘা জমির পাট এখনো কাটতে পারিনি। জমিতেই অনেক গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো থেকে আর আঁশ পাওয়া যাবে না। ৭/৮শ টাকা করে মজুরি দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।

আটঘরিয়ার উত্তরচক গ্রামের কৃষক তোরাব উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, পানির অভাবে এক বিঘা জমিতে লাগানো পাটগাছের পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। আষাঢ় মাসের মধ্যে পাট কেটে জাগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আষাঢ় মাস শেষ হলেও বৃষ্টির দেখা মেলেনি। তাই পাট এখন খড়ি হিসেবে ব্যবহার করা ছাড়া উপায় নেই।

সুজানগরের পদ্মাপাড়ে পাটগাছ পালা করে রাখা আবু সাঈদ বলেন, ১০ কিলোমিটার দূরে দূর্গাপুর থেকে ইঞ্জিনচালিত  গাড়িতে ৩০০ টাকা প্রতি গাড়ি হিসেবে পদ্মাপাড়ে নিয়ে আসছেন। জাগ দিতে পুকুর মালিককে ১ হাজার টাকা করে দিতে হচ্ছে।

আতাইকুলা থানার পাটের পাইকারি ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে প্রতি মণ পাট ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাটের এই দর গত বছরের তুলনায় বেশি। গত বছর একই সময়ে ভালোমানের পাট মণ প্রতি ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। 

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাইফুল আলম বলেন, পাট জাগ দিতে যাতে কৃষকদের কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্য ইতোমধ্যে সেচ প্রকল্পের ক্যানেলগুলোতে পানি সরবরাহ নিশ্চিতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি স্লুইস গেট খুলে বিলে পানি ঢোকানোর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সাময়িক সময়ের জন্য কৃষকরা বিড়ম্বনার মধ্যে পড়লেও আশা করি দ্রত সময়ের মধ্যে কৃষকদের কষ্ট দূর হবে। আগামী বছর কৃষকরা যেন বিড়ম্বনার শিকার না হোন সেটার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

রাকিব হাসনাত/এসপি