রংপুর জেলায় হঠাৎ গরু চুরির ঘটনা বেড়েছে। গত পাঁচ দিনে রংপুর নগরীর তিনজন এবং তারাগঞ্জের এক খামারির গোয়াল ঘর থেকে ১১টি গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় ৩৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে ভুক্তভোগী খামারির। চুরি হওয়া গরু উদ্ধারে কাজ করছে পুলিশ। ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের সঙ্গে কথা বলে তালিকা করার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
 
জানা গেছে, বুধবার (২৭ জুলাই) রাতে তারাগঞ্জ উপজেলায় কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর বেলতলী গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমানের গোয়াল ঘর থেকে ৪ গরু চুরি হয়েছে। বাড়ির পেছনের প্রাচীর ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে গোয়াল ঘরের তালা কেটে গরু নিয়ে গেছে চোরেরা। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ওই খামারি অনেকটাই ভেঙে পড়েছেন।

এ ব্যাপারে কৃষক মতিয়ার রহমান বলেন, বুধবার রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে লোকজন গোয়াল ঘরে তালা দিয়ে পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। রাতে বৃষ্টি পড়ছিল। সকালে উঠে গোয়াল ঘরের দরজা ভাঙা অবস্থায় দেখতে পায় তারা। বাড়ির পেছনের প্রাচীর ভেঙে চোরেরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

ওই কৃষকের ছোট ভাই আব্দুল হামিদ বলেন, অনেক সখ করে বড় ভাই গরুগুলো পুষছিলেন। হঠাৎ রাতের আধারে গরুগুলো চুরি হওয়ায় ভেঙে পড়েছেন তিনি। আর্থিকভাবে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন। দিনরাত পরিশ্রম করে অস্ট্রেলিয়ান জাতের দুটি গরু ও দুটি দেশি জাতের গরু পুষতেন। গোয়াল ঘর শুন্য করে চোরেরা সব কয়টি গরু চুরি করে নিয়ে গেছে। চুরি যাওয়া গরু ৪টির অন্তত ৫ লাখ টাকা দাম হবে।

তারাগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুশান্ত কুমার সরকার বলেন, গরু উদ্ধারের জন্য আমরা জোর চেষ্টা চালাচ্ছি।

অন্যদিকে রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ এলাকায় শনিবার (২৩ জুলাই) দিবাগত রাতে তিন খামারির গোয়াল ঘর থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকার মোট ৭টি গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। মাহিগঞ্জের খামারি গৌতম বোসের খামার থেকে ২টি, হাসান আলীর ২টি এবং আনোয়ার হোসেন ৩টি গরু চুরি করে নিয়ে গেছে চোরেরা। প্রত্যেকটি গরু ৩-৪ লাখ টাকা দাম হবে বলে দাবি করছেন ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা।

এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, পুলিশ প্রশাসন ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। হঠাৎ গরু চুরির এমন ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা। এ সময় দ্রুত চুরি যাওয়া গরু উদ্ধার করাসহ চোরচক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত খামারি গৌতম বোস জানান, টানা কয়েকদিনের গরমের পর হঠাৎ করে শনিবার রাতে বৃষ্টি হওয়ায় ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ৪টার দিকে গরুর চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায়। গরুর গোয়ালে গিয়ে দেখি দরজা খোলা, ৩টি গরু নাই। পরে বাহিরে খোঁজাখুঁজির পর একটি গরু পাওয়া যায়। এ বিষয়ে থানা পুলিশকে অবগত করেছি।

রংপুর জেলা ডেইরি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লতিফুর রহমান মিলন জানান, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়ে প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। যেকোনো উপায়ে গরু চুরি বন্ধ করতে হবে। এ জন্য প্রশাসন তৎপরতা শুরু করেছে। আমরা এই চক্রের জড়িতদের শাস্তির পাশাপাশি চুরি যাওয়া গরু উদ্ধারে প্রশাসনের সহযোগিতা আশা করছি।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের মাহিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান জানান, গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে, সেগুলো পর্যালোচনা করে যত দ্রুত সম্ভব অপরাধীদের সনাক্ত করা হবে। চুরি যাওয়া গরুগুলো উদ্ধারে আমরা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

অন্যদিকে রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের একটি তালিকা করা হয়েছে। তারাগঞ্জের ঘটনাটিও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রেরণ করেছি। যাতে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের পাশে দাঁড়ানো যায়। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই