মহামারি করোনার কারণে দুই বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে যাত্রী পারাপার বন্ধ রয়েছে। এতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন এ রুট ব্যবহারকারী পর্যটক, রোগী ও ব্যবসায়ীরা। তাই পর্যটকরা এ রুটে দ্রুত ভিসা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণের কারণে দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় এ রুটে ভ্রমণ ভিসায় যাত্রী পারাপার বন্ধ রয়েছে। চলতি বছরের ৭ এপ্রিল ভ্রমণ ভিসায় ভারতে যাতায়াতের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশনে অজ্ঞাত কারণে ভ্রমণ ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। 

চলতি বছরের নতুন ভিসায় যাদের বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ী রুট উল্লেখ থাকবে, কেবল তারাই এই রুট ব্যবহার করতে পারবেন বলে জানানো হয়। কিন্তু ঠাকুরগাঁওয়ে ভিসা সেন্টারে ভিসা করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন পাসপোর্টধারী যাত্রীরা। 

বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ী ইমিগ্রেশন রুটে ভিসা চালুর দাবিতে গত ২৬ জুন পঞ্চগড় চেম্বার অব কমার্স ভবনে এক সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপ। সেখানে জানানো হয়, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় গত মার্চ থেকে সব ধরনের ভিসা দেওয়া শুরু করে ভারত। কিন্তু ভিসায় রুট নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন ভারত, নেপাল এবং ভুটানের যাত্রীরা। এ রুট ব্যবহার করে শিক্ষার্থী, রোগী, ব্যবসায়ীসহ পর্যটকরা ভারত, নেপাল এবং ভুটানে যাতায়াত করেন। এই রুটে ভিসা না দেওয়ায় সমস্যায় পড়েছে স্থানীয়সহ দেশের হাজারো মানুষ।

স্থলবন্দর ঘুরে জানা যায়, ভিসা না থাকায় প্রাণচাঞ্চল্য নেই দেশের চতুদের্শীয় স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশনে। আগে সরগরম থাকলেও এখন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে রয়েছে ইমিগ্রেশনটি। 

পর্যটন সংশ্লিষ্ট সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো জানায়, ভারতের দার্জিলিং, কাঞ্চনজঙ্ঘা, গ্যাংটক, ডুয়ার্সসহ নেপাল-ভুটানের বহু পর্যটক ব্যবহার করতেন বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট। বর্তমানে এ রুট বন্ধ থাকায় ভারত-নেপাল-ভুটান থেকে আসা পর্যটক যেমন কমে গেছে, তেমনি বাংলাদেশি পর্যটকরা যেতে পারছেন না। অনেকে বাধ্য হয়েই ভিন্ন রুট হিসেবে হিলি, বুড়িমারী কিংবা বেনাপোল স্থলবন্দর ব্যবহার করছেন। এতে তাদের প্রচুর সময় ও অর্থ ব্যয়ের সঙ্গে দুর্ভোগও পোহাতে হচ্ছে।

পর্যটকরা জানান, দেশের অন্যান্য স্থলবন্দর থেকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের গুরুত্ব আলাদা। এ বন্দর থেকে ভারত, নেপাল, ভুটান কাছাকাছি হওয়ায় পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসুদের কাছে সবচেয়ে বেশি পছন্দ স্থলবন্দরটি। বিশেষ করে এ বন্দর দিয়ে অল্প সময়ে ভারতের শিলিগুড়ি, দার্জিলিং, সিকিম, গ্যাংটকসহ নেপাল ও ভুটান ঘুরে আসা যায়। ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া যায় সহজে।

বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন রুটের নিয়মিত যাত্রী কবীর আকন্দ বলেন, দুই বছর ধরে ভারত যেতে পারছি না। অন্যান্য স্থলবন্দরে ভারতীয় ভ্রমণ ভিসা চালু থাকলেও অজ্ঞাত কারণে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ভারতীয় ট্যুরিস্ট ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে আমাকে এখন অন্য রুটে যেতে হচ্ছে। এতে করে সময় ও অর্থ দুটিই বেশি লাগছে।

পর্যটক সাব্বির হোসেন বলেন, কদিন আগে ভারত গিয়েছিলাম বুড়িমারী স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন রুট ব্যবহার করে। অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। সময়, অর্থ দ্বিগুণ ব্যয় হয়েছে। অথচ বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশনে ট্যুরিস্ট ভিসা চালু থাকলেও এই ভোগান্তি পোহাতে হতো না।  

জেলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, করোনার দুই বছরে নতুন পাসপোর্ট করেছেন সাড়ে ৫ হাজার মানুষ। নতুন ভিসা না পাওয়ায় বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ব্যবহার করে ভারতসহ কাঙ্ক্ষিত দেশগুলোতে যেতে পারছেন না। গেল ঈদের সময় বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট খুলে দেওয়ার পর এখানে পাসপোর্টের আবেদন বেড়েছে।

বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট চালু রয়েছে। যে সমস্যার কারণে এ স্থলবন্দর ইমিগ্রেশনে ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ রাখা হয়েছিল, সে সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে ভারতীয় হাইকমিশনার বন্দরটিতে ঘুরে গেছেন। শিগগিরই ট্যুরিস্ট ভিসা দেওয়া হবে।

এসপি