ভুক্তভোগী আ. খালেক ফেরদৌস (বাঁয়ে) ও চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিয়াউল হক মীর

কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিয়াউল হক মীরের বিরুদ্ধে আব্দুল খালেক ফেরদৌস নামে এক সাবেক ইউপি সদস্যকে গালিগালাজ ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। 

গত ২৭ জুন বিকেলে এ ঘটনা ঘটলেও এতদিন ভয়ে প্রকাশ করেননি বলে দাবি করেন নির্যাতনের শিকার ব্যক্তি।

ভুক্তভোগী আব্দুল খালেক ফেরদৌস কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ১০ নম্বর গল্লাই ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য। তিনি ঢাকা পোস্টকে জানান, গত ২৭ জুন তিনি এবং তার ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার চান্দিনার সংসদ সদস্য ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের নির্দেশে গল্লাই আবেদা নূর গার্লস স্কুলের সমস্যা সমাধানের জন্য ইউএনও অফিসে যান। কক্ষে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে ইউএনও জিয়াউল হক গালিগালাজ করে তাদের বের করে দেন এবং ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে বলেন। এক ঘণ্টার জায়গায় ৩ ঘণ্টা হয়ে গেলেও ইউএনও তাদের আর ডাকেননি।

এরপর তারা ইউএনওর কক্ষে আবার যান এবং বলেন, ‘স্যার আমাদের ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে বলেছিলেন এখন তো ৩ ঘণ্টা হয়ে গেল।’ 

এ কথা বলার পর ইউএনও আবারও গালিগালাজ করে তাদের বের হয়ে যেতে বলেন বলে জানান আব্দুল খালেক।

বিষয়টি সংসদ সদস্য ডা. প্রাণ গোপাল দত্তকে ফোন করে জানান তারা। 

আব্দুল খালেক বলেন, ‘এর কিছুক্ষণ পর ইউএনও আমাকে অফিসে নিয়ে বাকি সবাইকে বাইরে থাকতে বলেন। সেখানে তিনি আমার মা-বাবা তুলে গালিগালাজ করেন এবং আমার গায়ে হাত তোলেন। আমি কেন এমপি মহোদয়ের কাছে ফোন করলাম, এটা জানতে চান। এসময় তিনি আমাকে ভ্রাম্যমাণ আদালত দিয়ে ২ মাস জেল খাটানোর ভয়ও দেখান।’

ঘটনাস্থলে গল্লাই আবেদা নূর গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষক গুলশান আরা এবং ইউএনওর দেহরক্ষী উপস্থিত ছিলেন বলে জানান আ.খালেক ফেরদৌস। ইউএনও অফিসের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করলে পুরো ঘটনার সত্যতা পাওয়া যাবে বলেও জানান তিনি। 

তিনি বলেন, আমি জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, কিন্তু কয়েকজন চেয়ারম্যান এবং এমপি মহোদয়ের বিচারের আশ্বাসে বিরত থাকি। গত শুক্রবার এমপি মহোদয় আমার বাড়িতে এসে আমার হাত ধরে বলেন, মনে করো এটা আমি করেছি। আমাকে বিষয়টা ভুলে যেতে বলেন। 

এ বিষয়ে গল্লাই আবেদা নূর গার্লস উচ্চ বিদ্যালের প্রধান শিক্ষক গুলশান আরা মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কথা বলতে পারব না। আমার সমস্যা আছে। ঘটনার সময় ওখানে অন্তত ৩০ জন মানুষ ছিলেন। আমি কারও পক্ষেই বলতে পারব না। আপনারা অন্য কারও কাছে জিজ্ঞেস করুন।’ 

ঘটনাস্থলে গল্লাই আবেদা নূর গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষক গুলশান আরা এবং ইউএনওর দেহরক্ষী উপস্থিত ছিলেন বলে জানান আব্দুল খালেক ফেরদৌস। ইউএনও অফিসের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করলে পুরো ঘটনার সত্যতা পাওয়া যাবে বলেও জানান তিনি। 

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) কুমিল্লার সাবেক সভাপতি বদরুল হুদা জেনু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘যেহেতু তিনি প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সেহেতু তার কাছে যে কেউ যেতে পারেন। তিনি পারলে হ্যাঁ বলবেন, না পারলে না বলবেন। কিন্তু কাউকে লাঞ্ছিত করার অধিকার রাষ্ট্র তাকে দেয়নি। ইউএনও যদি এমন কাণ্ড করে থাকেন, তবে তিনি গুরুতর অপরাধ করেছেন। এটা তার ক্ষমতার অপব্যবহার।’ 

অভিযুক্ত চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিয়াউল হক মীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘তিনি যে অভিযোগটি করেছেন সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। ওই মেম্বারের সঙ্গে আনসারদের একটু কথা কাটাকাটি ও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমরা পরে বিষয়টিকে সমাধান করে দিয়েছি। আমার সঙ্গে মেম্বারের কিছু হয়নি।’

এ বিষয়ে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বিষয়টি আপনার কাছ থেকেই প্রথম শুনলাম। এমন কিছু ঘটে থাকলে সাবেক ওই মেম্বার আমার কাছে অভিযোগ দিলেন না কেন? তারপরও যদি লিখিত অভিযোগ দেন আমি তদন্ত করে দেখব। ইউএনওর দোষ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ 

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে ঢাকা পোস্টের এ প্রতিবেদক কুমিল্লা-৭ চান্দিনা আসনের সংসদ সদস্য ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের মুঠোফোনে কল দিলে, ‘বিষয়টি মিটমাট হয়ে গেছে’ বলেই কল কেটে দেন তিনি।  

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিনকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে তার মোবাইলে একটি ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

এর আগে গত ২১ জুলাই ‘নিচু জায়গায় নির্মাণ করা উপহারের ঘর পানিতে ভাসছে’ শিরোনামে ঢাকা পোস্টের একটি সংবাদকে ঘিরে প্রতিনিধির ওপর ক্ষিপ্ত হন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি তার অফিসিয়াল নম্বর থেকে ঢাকা পোস্টের কক্সবাজার প্রতিনিধি সাইদুল ফরহাদকে ফোন করে ধমক দেন এবং গালিগালাজ করেন।

এই ফোনালাপের অডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে তীব্র সমালোচনা হয়।

পরে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কায়সার খসরু ঢাকা পোস্টের কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধির কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান।

ওই ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলেন, একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা যে ভাষা ব্যবহার করেছেন তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য ও আপত্তিকর। কোনো রং হেডেড ব্যক্তি ছাড়া এ ধরনের ভাষা কেউ ব্যবহার করতে পারেন না।

পরবর্তীতে টেকনাফের ইউএনওকে ওএসডি করে প্রত্যাহার করা হয়।

আরিফ আজগর/এমএএস/জেএস