‘কতদিন ধরি হামরা কষ্ট করোছি। হামার কষ্ট কি কারও চোকোত পড়ে না? বর্ষাকালোত রাস্তা দিয়্যা হাঁটা-ই যায় না। আর ভোট আসলে নেতারা কয় এবার রাস্তা ঠিক করা হইবে। কিন্তু ভোট শ্যাষে কোনো কাম-ই হয় না। এই তিন কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পাকা করার জনতে কতদিন ধরি মেম্বার, চেয়ারম্যান থাকি শুরু করি এমপি সাইবোক কওছি। কায়ো হামার রাস্তা কোনো পাকা করি দেওছে না। ওই তকনে জমিত নোয়াত এবার হামরা রাস্তাত ধান নাগাওছি।’  
 
এভাবেই দীর্ঘদিনের ক্ষোভ আর আক্ষেপ থেকে কথাগুলো বলছিলেন রাসেল মিয়া। দুর্ভোগ লাঘবে দীর্ঘদিন থেকে কাঁচা রাস্তা পাকাকরণের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় প্রতিবাদ জানাতে চলাচলের রাস্তার ওপর ধানের চারা লাগিয়েছেন তিনি। ব্যতিক্রমী এ প্রতিবাদে রাসেল মিয়াসহ শত শত মানুষ অংশ নেন।  

সোমবার (১ আগস্ট) সকালে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের কিশামত হাবুর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের উমর জামে মসজিদ সংলগ্ন মোজাহরুলের বাড়ির সামনে কাঁচা রাস্তায় ধানের চারা লাগিয়ে প্রতিবাদ করেন এলাকাবাসী।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের কিশামত হাবু থেকে উমর বালাটারী পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার পুরোপুরি কাঁচা রাস্তা। এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করা দুষ্কর। বিশেষ করে বর্ষাকালে রাস্তায় যানচলাচল তো দূরের কথা হাঁটা-চলাও তাদের জন্য কষ্টকর হয়। অথচ এই ৩ কিলোমিটার রাস্তার দুইধারে প্রায় ১ হাজার পরিবারের বসবাস। দীর্ঘদিন কাঁচা রাস্তাটি সংস্কার করে পাকাকরণের জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকার লোকজন। কিন্তু এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেননি জনপ্রতিনিধিরা। এ কারণে দুর্ভোগে পড়া এলাকাবাসী ক্ষুদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তার ওপর ধানের চারা রোপণ করেন।

এলাকার সোহরাব মিয়া বলেন, হামার এই রাস্তা দিয়্যা গজঘণ্টা ইউনিয়নের কয়েকটি ওয়ার্ডের মানুষ প্রত্যেকদিন যাতায়াত করে।  
গ্রামের মানুষ ঠিক মতো মসজিদও যাবার পারে না। বাড়ি থাকি ব্যারে মসজিদ যাবার সময় কায়ো না কায়ো পাও পিছলে পড়ি যায়। এই কষ্ট-দুর্ভোগ থাকি হামরা মুক্তি চাই। মেলাদিন ধরি রাস্তা কোনা মেরামত করার জনতে মেম্বার ও চেয়ারম্যানোক কওয়া হইছে। কিন্তু কোনো সমাধান হয় নাই।  

নির্বাচনের সময় অনেকবার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা কেউই পূরণ করেননি দাবি করে আমিনুল ইসলাম নামে আরেকজন জানান, চেয়ারম্যানের কাছে ধর্ণা দিতে দিতে আমরাই ক্লান্ত। শুধু চেয়ারম্যান মেম্বার না, উপজেলা চেয়ারম্যান না, এমপির কাছেও এলাকাবাসী কয়েক দফা গেছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। অল্প টাকা হলে আমরা এলাকাবাসী সবাই মিলে রাস্তাটি পাকা করতে পারতাম।

স্থানীয় মোজাহারুল ইসলাম বলেন, বর্ষাকালে নামাজ পড়তেও যাওয়া যায় না। এমন দুর্ভোগ জেনেও মেম্বার-চেয়ারম্যান কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। যার কারণে এলাকার সবাই আজকে আবাদি জমি ছেড়ে রাস্তার ওপর ধানের চারা রোপণ করে প্রতিবাদ করছে। আমরা চাই দ্রুত রাস্তাটি সংস্কার করে পাকা করা হোক।

এ ব্যাপারে গজঘণ্টা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী বলেন, ওই রাস্তা দিয়ে আমি নিজেও চলাচল করি। বৃষ্টি হলে তো কাদা হবেই। এলাকার লোকজনের দাবির সঙ্গে আমিও একমত। কিন্তু এখন তো ইউনিয়ন পরিষদের ফান্ড নেই। তাছাড়া রাস্তাটি এলজিইডিকে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ মিললে কাজ শুরু হবে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই