ফরিদপুরের সদর উপজলার গেরদা ইউনিয়নের বাখুন্ডা-তাম্বুলখানা-কানাইপুর সড়কের সংস্কারকাজ শুরু হওয়ার পর বন্ধ রয়েছে চার বছর ধরে। এতে ১০ গ্রামের অন্তত ২২ হাজার মানুষ রয়েছে চরম ভোগান্তির মধ্যে।

এ সড়কের ঠিকাদারি কাজ পেয়েছেন ঠিকাদার সাজ্জাদ হোসেন বরকত। তিনি এখন দুই হাজার কোটি টাকা অর্থ পাচার মামলায় কারাগারে বন্দি।

চলতি বর্ষা মৌসুমে এ সড়কটি পানি ও কাদায় পরিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। রিকশা, ভ্যানসহ যেকোনো যানবাহন তো দূরের কথা, হেঁটেও সড়কটি অতিক্রম করা দুঃসাধ্য হয় পড়েছে এলাকাবাসীর জন্য।

জানা যায়, স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সড়কটি ফরিদপুর সদর উপজেলার গেরদা ইউনিয়নের বাখুন্ডা বাজার হয়ে ক্লাব বাজার-কৈজুরি ইউনিয়নের তাম্বুলখানা হয়ে কানাইপুর ইউনিয়নে গিয়ে মিশেছে। এর মধ্যে কৈজুরী ইউনিয়নের মধ্য পড়েছে প্রায় ছয় কিলোমিটার অংশ। এ অংশটির অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।

এ সড়ক দিয়ে স্থানীয় বাখুন্ডা, চরপাড়া, ক্লাব বাজার, আকইন ভাটপাড়া, কৈজুরী, বতবাড়িয়া, তাম্বুলখানাসহ ১০টি গ্রামের ২২ হাজার মানুষ এখন চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে চলাচল করছে। সড়কটির বেশির ভাগ জায়গায় বড় বড় খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। অল্প বৃষ্টি হলেই গর্তে পানি জমে কাদামাটি হয়ে যায়। তখন চলাচল দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, একাধিকবার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তরে মৌখিকভাবে ও চিঠি দিয়ে দ্রুত এ সড়কর সংস্কারকাজ শেষ করার জন্য দাবি জানালেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। এ জন্য এ সড়কের এই বেহাল দশা নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই ওই গ্রামগুলোর বাসিন্দা ও ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, কৃষক, যুবক, নারীসহ সবার।

সমষপুর বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আনায়ার হোসন বলেন, এ রাস্তা দিয়ে ভ্যান কিংবা অটোরিকশায় গেলে মনে হয় উত্তাল পদ্মানদী পার হচ্ছি। হেলেদুলে চলতে হয়।

এলজিইডি জানায়, ২০১৮ সালে বাখুন্ডা থেকে তাম্বুলখানা বাজার হয়ে আকইন সাইচা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলামিটার এ রাস্তাটির কাজ পান ঠিকাদার সাজ্জাদ হোসেন বরকত। তিনি ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে তিনি ঢাকার সিআইডির করা দুই হাজার কোটি টাকা অর্থ পাচার মামলার আসামি হয়ে কারাগারে রয়েছেন।

এলাকাবাসী জানান, সাজ্জাদ এ কাজ পাওয়ার পর সে সময় সড়কটির আকইন-সাইচা অংশের ইটের সলিং তুলে ফেলা হয়। তা ছাড়া কাজের জন্য বাখুন্ডা বাজার থেকে তাম্বুলখানা বাজার পর্যন্ত সড়কটির বেশির ভাগ স্থানের পিচঢালাইও তুলে ফেলা হয়। পরে তিনি গ্রেপ্তার হলে রাস্তার কাজ বন্ধ হয় যায়। তখন থেকেই চার বছর ধরে রাস্তাটির বেহাল দশা।

কৈজুরী ইউনিয়নের বাসিদা রাউফুরনবী বলেন, দীর্ঘদিন ধর সড়কটির অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হলেও কেউ নজর দিচ্ছে না। ফলে ভয়াবহ ভোগান্তির মধ্য দিয়ে আমাদের চলাচল করত হচ্ছে। দ্রুত সড়কটির কাজ পুনরায় শুরু করে শেষ করার দাবি জানাচ্ছি। এ দুর্ভোগ আর সহ্য হচ্ছে না আমাদের।

আইকন গ্রামের বাসিদা মোহাম্মদ আলী বলেন, আকইন সেতু থেকে আকইন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার রাস্তার ইট তুলে ফেলায় বর্তমান সড়কটি দিয়ে হেঁটে চলাচলও কষ্টকর হয়ে পড়ছে। সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদর। বৃষ্টির কারণে সড়কে কাদা-পানি জমে একাকার হয় যায়। তখন সড়কটি দিয়ে চলাচলের কোনো উপায় থাকে না।

এ রাস্তাটি নিয়ে কৈজুরী ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সদস্যরাও নানা সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। তারা স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়ছেন।

কৈজুরী ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. হায়দার শেখ বলেন, এ সড়কটি নিয়ে খুব বেকায়দায় আছি। জনগণ গালমন্দ করে আমাদের। অথচ এখানে তো আমাদের করার কিছুই নাই। তাই সব নীরবে সহ্য করতে হচ্ছে। এলজিইডিকে বিষয়টি জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

ফরিদপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফারুক হোসেন জানান, সড়কটির বিষয়ে আমরা অবগত আছি। আগের ঠিকাদার সাজ্জাদ হোসেন দীর্ঘদিন কারাগারে থাকায় নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। চারজন ঠিকাদার কাজের জন্য দরপত্র জমা দিয়েছেন। আমরা সব কাগজপত্র ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।

জহির হোসেন/এনএ