বাগেরহাট সদর উপজেলার গাওখালী গ্রামে বাস করেন শতবর্ষী বৃদ্ধা বিমলা সাহা। সারাজীবন স্বপ্ন দেখেছেন একটি পাকা রাস্তা হবে এই গ্রামে। সরকার এসেছে, সরকার বদলেছে, অপেক্ষা শেষ হয়ে আক্ষেপে পরিণত হয়েছে- কিন্তু স্বপ্ন পূরণ হয়নি বিমলার। তাইতো জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসেও এক সমুদ্র দুঃখ তার মনে। স্থানীয়দের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় দাবি তুলতে তুলতে হাঁপিয়ে গেছেন অনেকটা। নিজেদের দুর্ভোগ লাঘবে এখন তাই সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শতবর্ষী এই নারী।

জানা যায়, স্বাধীনতার পর থেকেই যোগাযোগ সুবিধা বঞ্চিত সদর উপজেলার গোটাপাড়া ইউনিয়নের এই এলাকাটি। উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের কোনো পাকা রাস্তা নেই এখানে। রিকশা বা ভ্যান দূরে থাক, সাইকেলেও চলাচল করা যায় না রাস্তাটি দিয়ে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, বৃষ্টি হওয়ায় কাদা-পানিতে একাকার হয়ে আছে রাস্তাটি। পথ চলতে মানুষকে নাজেহাল হতে হচ্ছে। গাঁওখালী-রঘুনাথপুর হয়ে মূল সড়কে আসার জন্য মধ্যবর্তী এই দুই কিলোমিটার রাস্তা দুই দশক আগে ইটের সলিং দিয়ে তৈরি করা হয়। কিন্তু রাস্তার বেশির ভাগ ইট উঠে গেছে। এতে এলাকাবাসীর দুর্ভোগের শেষ নেই। আর যে অংশে ইটের সলিং, তা আস্তে আস্তে উঠে কাদায় পরিণত হচ্ছে। এ ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্মিত বাঁধ ও রাস্তা বৃষ্টি আর জোয়ারের পানি বাড়লেই তলিয়ে যায়। ভেসে যায় পুকুর ও ঘেরের মাছ। 

স্থানীয় মনিষ কান্তি সাহা বলেন, বৃষ্টি হলে কাঁচা রাস্তায় কাদা-পানি জমে থাকে। তখন হেঁটে চলাও কঠিন হয়ে পড়ে। আর কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিতে দুর্ভোগের শেষ থাকে না। জেলা শহরের এত কাছে থেকেও আমাদের মতো হতভাগ্য আর কোনো এলাকা নেই।

বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ আরও বেশি। গাওখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্পন সাহা বলে, স্কুলে যেতে হলে ভিজে যেতে হয়। কাদায় স্লিপ করে পড়ে যাই অনেক সময়। এভাবে স্কুলে যেতে আমাদের আর ভালো লাগে না। 

পূর্ণিমা নামের অপর এক শিক্ষার্থী বলে, কালকেও আমাদের দুই বন্ধু পানির মধ্যে পড়ে গেছে। হাঁটু সমান পানির মধ্যে দিয়ে আসতে আমাদের খুব ভয় লাগে। 

কালা সাহা নামে এক অভিভাবক বলেন, বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে দুঃশ্চিন্তায় থাকতে হয়। কাদায় পড়ে না পানিতে ডুবে। জোয়ারে রাস্তায় অনেক স্রোতও হয়। বড়রাই ঠিকভাবে চলতে পারে না, সেখানে ছোট বাচ্চারা কীভাবে চলবে। 

গাওখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক চিত্তরঞ্জন সাহা বলেন, কাদা-মাটির রাস্তার কারণে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসতে খুব কষ্ট হয়। রাস্তা-ঘাট খারাপ হওয়ায় অনেকেই বিদ্যালয়ে আসতে চায় না। এতে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে।  

গৃহিণী রিক্তা বৈরাগী বলেন, বৃষ্টি আর জোয়ারে জল উঠে সব তলিয়ে যায়। রান্নার চুলাও ডুবে যায়। তখন পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকা লাগে। একটা রাস্তা কি আমাদের কোনো দিন হবে না।

গণেশ প্রামানিক নামে এক ব্যক্তি বলেন, ঝড়-বৃষ্টি হোক বা জোয়ার আসুক, আমাদের গ্রাম তলিয়ে যায়। পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে খালে চলে যায়। একটি পাকা রাস্তার অভাবে আমাদের দুঃখের কোনো শেষ নেই। 

স্থানীয় ৯নং ওয়ার্ডের (গাওখালী) ইউপি সদস্য মো. ইলিয়াস বালি বলেন, গ্রামের মধ্যে দুই কিলোমিটার রাস্তার কিছু জায়গার ইট উঠে মাটি বের হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন রাস্তাটি সংস্কার করা হয়নি। 

বৃষ্টি বা জোয়ারে যাতায়াতে সমস্যার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি, আমরা চেষ্টা করছি সমস্যা সমাধানের।

গোটাপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ শমসের আলী বলেন, আশপাশে পাকা রাস্তা থাকলেও দুই গ্রামের মধ্যে মাত্র দুই কিলোমিটার যে কাঁচা রাস্তা রয়েছে, তার জন্য স্থানীয়রা কিছুটা ভোগান্তিতে রয়েছেন। তবে আশা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এখানে পিচের রাস্তা হয়ে যাবে। 

বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, এই সংক্রান্ত সমস্যার কথা এখন পর্যন্ত স্থানীয় কোনো জনপ্রতিনিধি আমাদের জানায়নি। খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

তানজীম আহমেদ/আরএআর