কুমিল্লায় ১০০ থেকে ২০০ বছর আগের প্রায় ১০০ প্রকার মুদ্রা এবং বিভিন্ন আসবাবপত্র সংরক্ষণ করে ব্যক্তি উদ্যোগে মিনি জাদুঘর তৈরি করেছেন শাহ আলমগীর খান নামে এক জুয়েলারি ব্যবসায়ী। শহরের চকবাজার এবং রাজাগঞ্জ এলাকার মাঝখানে ছাতিপট্টি ইউসিবি ব্যাংকের পূর্বপাশে আজম খান জুয়েলার্সে এসব প্রাচীন মুদ্রার দেখা মিলবে।

শুধুমাত্র প্রাচীন মুদ্রাই নয়, এখানে আছে প্রাচীন মানুষের ব্যবহৃত বিভিন্ন ধাতুর তৈরি চেয়ার, নৌকা, সেতার, আতরদানি, কাটা চামচ, চামচ, কুপি, সুরমাদানি, সিঁদুরদানি, ফুলদানি, নারীদের গলার হার, পায়ের মল, কানের মাকড়ি, চাবিদানি, আংটি ইত্যাদি। এসব আসবাবের বেশিরভাগ রুপার তৈরি হলেও এখানে রয়েছে ব্রোঞ্জ, তামাসহ বিভিন্ন ধাতুর তৈরি মুদ্রা। 

কুমিল্লা নগরীর এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১০০ বছর ধরে বংশ পরম্পরায় পরিচালিত হয়ে আসছে।  প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান কর্ণধার শাহ আলমগীর খান জানান, তার বাবা মরহুম আলী আজম খান শখের বসে প্রাচীন মুদ্রা এবং আসবাবপত্র সংগ্রহ করে বাসায় রাখতেন। বাবার মৃত্যুর পর ১৯৭৫ সালে ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেন তিনি। বাবার রেখে যাওয়া এসব প্রাচীন মুদ্রা এবং আসবাবপত্র মন কাড়ে তারও। পরে ওই স্বর্ণ দোকানেই আলাদা সংরক্ষণাগার তৈরি করে সেগুলো সেখানে রাখেন। ৭৫ বছর ধরে এসব মুদ্রা এবং আসবাবপত্র সংরক্ষণ করছেন তিনি। 

শাহ আলমগীর খান আরও জানান, প্রাচীন যুগ থেকেই এসব মুদ্রা এবং আসবাবপত্র সংগ্রহ করেছে তার পূর্বপুরুষরা। কুমিল্লার প্রাচীন জমিদার বাড়ি এবং বিভিন্ন নবাবদের বাড়ি থেকে এসব মুদ্রা সংগ্রহ করে করে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। এসব মুদ্রা এবং আসবাবের বেশিরভাগই রুপার তৈরি। এসব মুদ্রার মধ্যে বৃটিশ আমলের মুদ্রা, প্রাচীন পাকিস্তানি মুদ্রা, ভারতের ত্রিপুরা অঞ্চলের মুদ্রা, আমেরিকা, ইতালিসহ উন্নত বিশ্বের অনেক দেশের প্রাচীন মুদ্রা এবং বিভিন্ন আরব দেশের মুদ্রা রয়েছে। 

তিনি জানান, এসব মুদ্রা শুধুমাত্র ইতিহাস এবং ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। অনেক ক্রেতা প্রচুর মূল্য দিয়ে কিনতে আসলেও সেগুলো বিক্রি করছেন না তিনি। তবে এগুলো দেখতে অনেক দর্শনার্থী আসেন। দর্শনার্থীদের দেখার জন্যই অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে সেগুলো সংরক্ষণ করেছেন। তার তৈরি এই মিনি জাদুঘরে বর্তমান প্রজন্ম এবং ভবিষ্যতে যারাই আসবে, তারা প্রাচীন এসব মুদ্রা এবং আসবাব দেখে তার কথা স্মরণ করবেন বলে আশা করেন তিনি।  

সাগর আহমেদ নামে এক দর্শনার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, তার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তার কারণেই মূলত প্রাচীন এসব জিনিসপত্র দেখার সৌভাগ্য হচ্ছে, তাও আবার বিনামূল্যে।

জহির উদ্দিন ভূইয়া নামে আরেক দর্শনার্থী বলেন, ছয় বছরের মেয়েকে নিয়ে প্রাচীন এসব মুদ্রা এবং আসবাবপত্র দেখতে এসেছি। নিজের কাছে খুব ভালো লাগছে। আগে এসব জিনিসপত্র দেখতে জাদুঘরে যেতে হতো, এখন এখানে বিনামূল্যে দেখার সুযোগ পাচ্ছি। সেজন্য শাহ আলমগীর খানকে ধন্যবাদ। 

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কুমিল্লার আঞ্চলিক পরিচালক একেএম সাইফুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রাচীন এসব জিনিসপত্র এই এলাকার প্রাচীন ঐতিহ্য বহন করে। প্রাচীনকালে এ এলাকার মানুষের জীবনমান, শিক্ষা, সংস্কৃতি কেমন ছিল তার প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে এসবের মাধ্যমে। আমরা আলমগীর খান সাহেবের তৈরি করা মিনি জাদুঘরটি দেখতে যা। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর থেকে যা করণীয় সব করা হবে।

আরএআর