বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ৫ শতাধিক গান রচনা কারারক্ষীর
কারারক্ষী জাহাঙ্গীর আলম
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে পাঁচ শতাধিক গান রচনা করেছেন জাহাঙ্গীর আলম (৩২) নামে এক কারারক্ষী। জাতির জনক ছাড়াও গানের বিষয়বস্তুতে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও রয়েছেন।
তবে তিনি ১০ হাজার গান লেখার অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এমনকি সেই গান প্রকাশের অনুমতি চেয়ে গত ২০ জানুয়ারি কারা মহাপরিদর্শক বরাবর আবেদনও করেছেন। এ নিয়ে এখনও কোনো সংকেত পাননি তিনি।
বিজ্ঞাপন
কারারক্ষী জাহাঙ্গীর আলম রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে কর্মরত রয়েছেন। তার পরিচিতি নম্বর ৩২১৪৭। তিনি নওগাঁ জেলা সদরের তিলকপুর এলাকার বাসিন্দা। তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ফজল মো.আবদুল বারি। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় জাহাঙ্গীর।
২০০২ সালে নওগাঁর তিলকপুর মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন জাহাঙ্গীর আলম। এরপর ২০০৪ সালে নওগাঁ সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন তিনি। ২০০৫ সালের মার্চে তিনি কারারক্ষী হিসেবে যোগদান করেন।
বিজ্ঞাপন
চলমান বিভিন্ন ইস্যুতে নিজের লেখা ও সুর করা গান গেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সাড়া ফেলেছেন জাহাঙ্গীর আলম। ২৮ লাখের ওপরে রয়েছে তার অনুসরণকারী। রয়েছে তার আলাদা ইউটিউব চ্যানেল। বিভিন্ন সামাজিক কাজেও যুক্ত রয়েছেন তিনি। আয়ের একটি অংশ বিলিয়ে দেন অসহায়-দরিদ্র মানুষের কল্যাণে।
গান-কবিতা নিয়ে কথা হয় জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে জানান, বাবা ছিলেন রণাঙ্গনের লড়াকু সৈনিক। বাবার মুখে মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অবদান ও বীরত্বের গল্প শুনে বড় হয়েছেন। দেখেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা।
জাতির পিতা ও তার কন্যার এই অবদান গান ও কবিতার মধ্যে তিনি নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চান। এরই মধ্যে তিনি ৫ শতাধিক গান লিখেছেন জাতির পিতা ও তার কন্যাকে নিয়ে। এগুলো প্রকাশের অনুমতি চেয়ে গত ২০ জানুয়ারি তিনি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপারের মাধ্যমে কারা মহাপরিদর্শক বরাবর আবেদনও করেছেন। অনুমতি পেলে তিনি এগুলো যথাযথভাবে প্রচারের উদ্যোগ নেবেন।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, একজন শিল্পী তার জীবদ্দশায় ১০ হাজারেরও বেশি গান গাইতে পারেন। একজন গীতিকারও লিখতে পারেন ১০ হাজারের বেশি গান। কিন্তু একজন ব্যক্তিকে নিয়ে ১০ হাজার গান গাওয়া কিংবা লেখার রেকর্ড নেই। জাতির পিতা ও তার কন্যা শেখ হাসিনাকে নিয়ে ১০ হাজার গান লিখে অনন্য নজির গড়তে চাই। গড়তে চাই বিশ্বরেকর্ড। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সহায়তাও চান এই কারারক্ষী।
যাত্রা শুরুর গল্পটা ঢাকা পোস্টকে শুনিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি জানান, যখন হাইস্কুলের শিক্ষার্থী তখন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটা গল্প লিখেছিলেন তিনি। তা প্রকাশের পর শিক্ষকদের বাহবা পেয়েছিলেন। এ থেকেই যাত্রা শুরু।
মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় সন্তানের ওপর পরিবারের দায়িত্ব অনেক বেশি থাকে। সংসারের হাল ধরতেই উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে যোগ দেন কারাবাহিনীতে। কর্মজীবনে এসেও তার গান কবিতা চর্চায় ভাটা পড়েনি। নিজের সৃষ্টির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা শেখ হাসিনার অবদান তুলে আনছেন।
গান প্রকাশের শুরুতেই হোঁচট খেয়েছেন জানিয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, একজন সঙ্গীত পরিচালকের কাছে গিয়েছিলেন নিজের লেখা গান প্রকাশের উদ্দেশ্যে। ওই সঙ্গীত পরিচালক তাকে জানিয়েছিলেন, একটা গান প্রকাশে ৩০ হাজার টাকা লাগবে। সেই টাকা তিনি যোগাতে পারেননি। ফলে তার আর গান প্রকাশ হয়ে ওঠেনি।
এরপর সিদ্ধান্ত নেন খালি গলায় বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই নিজের লেখা গান নিজেই গাইবেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি গান গেয়ে ফেসবুকে আপলোড শুরু করেছেন। তা ভালোভাবে নিয়েছে মানুষজন। যদিও গান গাওয়া কিংবা সুরারোপে কোনো অভিজ্ঞতা নেই তার।
তিনি যোগ করে বলেন, লেখার জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন খ্যাতিমান লেখক হুমায়ুন আহমেদ। কিন্তু তিনি চাকরি ছেড়ে গান লেখা কিংবা গায়ক হতে পারবেন না। চাকরি ছাড়লে পরিবার নিয়ে চলতে পারবেন না। তবে কর্মস্থলে একটু সহযোগিতা পেলেই তিনি তার লক্ষ্যে পৌঁছে যেতে পারবেন।
জাহাঙ্গীর জানান, তিনি একজন খেটে খাওয়া মানুষ। দিনের তিন ভাগ সময়ই তাকে কর্মের মধ্যে থাকতে হয়। কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। এই একভাগ সময় তার সহকর্মীরা ভ্রমণ-বিনোদনে কাটান। কিন্তু তিনি এই সময়টুকু কাটান গান-কবিতা লেখায়। তিনি জানেন না তার এই কাজের সফলতা আসবে কিনা। তবে সুযোগ পেলে লক্ষ্যে পৌঁছে যাবেন বলে মনে করেন এই আত্মবিশ্বাসী শিল্পী।
এক সময় জয়পুরহাট জেলা কারাগারে দায়িত্ব পালন করেছেন কারারক্ষী জাহাঙ্গীর আলম। ওই সময় সেখানে কর্মরত ছিলেন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের বর্তমান জেলার তারেক কামাল। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, তাৎক্ষণিক বিভিন্ন ইস্যুতে জাহাঙ্গীর গান লিখে এবং সুর করে গেয়ে দেন। এটি তার প্রতিভা। তিনি তার এই প্রতিভাকে সম্মান জানান। তবে কারাবিধি মেনেই তাকে তার এই কর্মকাণ্ড চালাতে হবে।
এ নিয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। তবে কারাগারের সিনিয়র জেলসুপার সুব্রত কুমার বালা ঢাকা পোস্টকে বলেন, কারাবিধি অনুযায়ী দায়িত্বরত অবস্থায় উচ্চস্বরে কথা বলা যাবে না। গান গাওয়াতো যাবেই না। জাহাঙ্গীর আলম কারা মহাপরির্দকের অনুমতির জন্য আবেদন করেছেন। তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন কারা মহাপরিদর্শক।
সিনিয়র জেল সুপার আরও বলেন, কেউ ব্যক্তিগতভাবে কাউকে নিয়ে গান কবিতা লিখতেই পারেন। এ নিয়ে আমাদের তেমন কিছুই করার নেই। কেউ ভালো কাজ করলে আমরা তাদের উৎসাহ দেই। তবে ওই কারারক্ষী প্রক্রিয়া মেনে তার কাজ চালাবেন, এখানে আমাদের আলাদা করে কোনো ভূমিকা নেই।
এসপি