‘মায়ের সঙ্গে থেকে পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন রিয়া মনি। মা ফাহিমাও একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করে মেয়েকে আগলে রেখেছিলেন। স্বামী ছাড়া সংসারের পুরো দায়িত্ব একাই পালন করেছিলেন। মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দায়িত্বও প্রায় গুটিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু মেয়ের সংসারের সুখ দেখা হলো না। চলে যেতে হলো পরপারে।’

কথাগুলো বলছিলেন রিয়া মনি ও তার মা ফাহিমা আশুলিয়ার খেজুরবাগান এলাকার যে বাড়িটিতে (আশরাফ চেয়ারম্যানের বাড়ি) ভাড়া থাকতেন, সেই বাড়ির ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম। আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।’   

সোমবার বিকেলে উত্তরায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার চাপায় নিহত পাঁচজনের একজন ফাহিমা। এ ছাড়াও মৃত্যু হয়েছে রুবেল (৬০), ঝরনা (২৮), জান্নাত (৬) ও জাকারিয়ার (২)। অবশ্য মেয়ে রিয়া মনি ও তার স্বামী হৃদয় এ দুর্ঘটনা থেকে প্রাণে বেঁচে গেছেন।

রাত ১১টার দিকে আশুলিয়ার খেজুরবাগান এলাকার আশরাফ চেয়ারম্যানের বাড়িতে গেলে ম্যানেজার শফিকুল জানান, বাড়িটির ছয়তলার ৬০৪ নম্বর ইউনিটের একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে রিয়া মনি ও তার মা ফাহিমা আক্তার থাকতেন। রিয়ার ছোটভাই মাদ্রাসায় আবাসিকে থেকে পড়ে।

আরও পড়ুন : বৌভাতের অনুষ্ঠান থেকে বাড়ি ফিরছিল পরিবারটি

রিয়া মনি জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানার নওদত্ত গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে। রিয়া মনির বাবা আব্দুর রাজ্জাক আশুলিয়ার এ বাড়িতে অবশ্য কোনোদিন আসেননি। তার বাবার সম্পর্কে কোনো ধরনের তথ্যও পাওয়া যায়নি।

বাড়ির ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রিয়া মনি স্থানীয় রেডিয়ান্ট পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। মা চাকরি করতেন সিআইপিএল পোশাক কারখানায়। তারা দুজনই চাকরি করে বাসা ভাড়া দিয়ে রিয়ার ভাইয়ের পড়াশোনা চালিয়ে আসছিলেন। রিয়ার বিয়ের কথাবার্তা পাকা হলে আমি তাদের নানাভাবে সহযোগিতা করি। শনিবার বিয়ের ছোট্ট আয়োজনের ব্যবস্থা করে দিই বাড়ির ছাদে। ’

এ ঘরেই থাকতেন রিয়া ও তার মা ফাহিমা

তিনি আরও বলেন, ‘শনিবার আমি নিজে উপস্থিত থেকে বিয়ের সব কাজ সম্পন্ন করি। আজ সকালে রিয়া মনির মা, খালাসহ কয়েকজন আমার সামনে দিয়েই মিষ্টি হাতে করে বের হয়ে যান। তাদের জিজ্ঞেস করলে তারা রিয়া মনির বউভাতে যাবেন বলে জানান। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শুনি রিয়া মনি ও তার আম্মুরা অ্যাক্সিডেন্ট করেছেন, পাঁচজন মারা গেছেন। এ খবর শুনেই আশ্চর্য হয়ে গেলাম। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক, খবর শুনে খুবই কষ্ট পেয়েছি। ভুলতেই পারছি না যে, তারা আমার সামনে দিয়েই হেঁটে গেলেন।’

আরও পড়ুন : গার্ডারের নিচে ৩ ঘণ্টা পড়ে ছিল ৫ মরদেহ, এক্সক্যাভেটর দিয়ে উদ্ধার

রিয়া মনির বাবা সম্পর্কে শফিকুল বলেন, ‘এখানে তার বাবা থাকতেন না। আমরা জানতাম রিয়া মনির বাবা নেই। তার মা, ও ভাই ছাড়া এখানে তার নানা ও নানি থাকতেন বলে জানা গেছে। তবে বিয়ে উপলক্ষে গ্রাম থেকে রিয়ার খালা ঝরনা ও তার দুই সন্তান জান্নাত ও জাকারিয়াকে নিয়ে এসেছিলেন আশুলিয়ায়। তবে কী নিয়তি তাদের! ফিরতে হলো লাশ হয়ে।’

ফাহিমা সম্পর্কে পার্শ্ববর্তী মুদি দোকানি আল-মামুন বলেন, ‘আমার দোকান থেকে মাঝে মধ্যে বাজার নিতেন। তিনি কখনও বাকিতে বাজার নিতেন না। মানুষ হিসাবে অনেক ভালো ও নির্ভেজাল ছিলেন তারা। তাদের এ অবস্থা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।’

আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুদীপ কুমার গোপ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ফাহিমা তার মেয়ে রিয়া মনিকে নিয়ে আশরাফ চেয়ারম্যানের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা বাড়িওয়ালার সাথে যোগাযোগ করেছি। বর্তমানে তাদের বাসায় কেউ নেই।’

মাহিদুল মাহিদ/আরএইচ