নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় নদীভাঙনের কবলে রয়েছে মসজিদ ও কবরস্থান। বঙ্গোপসাগরে বিদ্যমান লঘুচাপ ও দক্ষিণাঞ্চলের ওপর সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর কারণে জোয়ারের পানিতে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। 

মেঘনা নদীর ভাঙনের এই ভয়াবহতায় রক্ষা পায়নি বসতভিটাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এরই ধারাবাহিকতায় সাদ্দাম বাজার জামে মসজিদ ও কবরস্থান বিলীনের পথে। ভাঙন আতঙ্কে আছেন নদীপাড়ের মানুষ। ভাঙনের ফলে ভিটেমাটি ছেড়ে অনেক পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙনের ফলে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করছে মেঘনাপাড়ের খেটে-খাওয়া মানুষ। নতুন করে ভাঙন শুরু হওয়ায় ভয় আর আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের। হাতিয়ার চানন্দী ইউনিয়নের সাদ্দাম বাজার জামে মসজিদের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। মসজিদটির কিছু অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। এছাড়া ভাঙনের কবলে রয়েছে জামে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থান। যেকোনো মুহূর্তে মসজিদ-কবরস্থান নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।

মসজিদের মুসল্লি স্থানীয় বাসিন্দা মোয়াজ্জেম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, খোদায় মসজিদটি নিয়ে যাচ্ছে। আমরা বহুত নামাজ পড়ছি এখানে। মসজিদটি আল্লাহর ঘর, আল্লাহ যেন যেকোনোভাবে মসজিদটি রক্ষা করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা সোলেমান মসজিদ সংলগ্ন তার বাবা মৃত ইসমাইল হোসেনের কবর দেখতে এসে অঝোরে কান্না করছিলেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বাবার কবর দেখতে এসেছি। নামাজ পড়ে বাবার কবর জিয়ারত করি। এখন যদি ভেঙে যায়, তাহলে আর কবর জিয়ারত করতে পারব না।

ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ৭ মাসের ছেলে সন্তানকে এই কবরস্থানে দাফন করেছেন ফাতেমা আক্তার। শেষবারের মতো সন্তানের কবরকে দেখতে এসেছেন তিনি। ফাতেমা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১২ বছর আগে আমার ছেলে মারা যায়। আমাদের বাড়ি কেয়ারিং চরে ছিল। সেখান থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে এই সাদ্দাম বাজার মসজিদের পাশে কবর দিয়েছি। এখন এই মসজিদ ও কবরস্থান ভেঙে যাচ্ছে। শেষবারের মতো সন্তানকে দেখতে এসেছি।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইউসুফ মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে সাড়ে তিনশ পরিবার ছিল। বড় বাজার ছিল, ভূমি অফিস ছিল, মসজিদের পাশে বড় পুকুর ছিল। আজ সব নদীতে চলে গেছে। এত সুন্দর মসজিদ চলে যাচ্ছে। কত মানুষ বেড়িবাঁধের পাশে বসবাস করছে। অনেকের কবর আছে, সেই কবরও ভেঙে যাচ্ছে। আমাদের কিছুই করার নাই। আল্লাহ ছাড়া কেউ কিছু করতে পারবে না।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেহ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, অদৃশ্য শক্তি কীভাবে সব কেড়ে নিচ্ছে। আমি বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার নেত্রী শেখ হাসিনাকে একবার দেখে যাওয়ার অনুরোধ করছি। লাখ লাখ ঘরবাড়ি, মানুষ কীভাবে অসহায় হয়ে বসবাস করছেন।

মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মো. হেলাল উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০০১ সালে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। আমি ১১ বছর ধরে এই মসজিদের ইমাম। এই এলাকায় এত বড় মসজিদ আর একটিও নেই। অনেক মানুষ এখানে নামাজ আদায় করেছে। তারা নদীগর্ভে ভিটেমাটি হারিয়ে এলাকা ছাড়া হয়েছে। নদী এখান থেকে ১০-১২ কিলোমিটার দক্ষিণে ছিল। আল্লাহর কুদরতে নদী আসতে আসতে এই মসজিদ পর্যন্ত চলে আসছে।

চানন্দী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আজহার উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মসজিদ-কবরস্থান ভেঙে যাচ্ছে দেখে সবার খারাপ লাগছে। আমাদের এমপি আয়েশা ফেরদাউস ও সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী নদীভাঙনরোধে সাহায্য করছেন। সম্প্রতি তারা চানন্দী ইউনিয়ন পরিদর্শন করেছেন। স্বেচ্ছায় জিও ব্যাগ ফেলার জন্য ২০ লাখ টাকা দিয়েছেন। সর্বমোট ১ কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমরা নদীভাঙন রক্ষা করতে পারব না। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল    ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। জোয়ারের মধ্যে নদীভাঙন রোধে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব নয়। তবে আমাদের সাড়ে তিনশো কোটি টাকার প্রকল্প রয়েছে। সেটি অনুমোদন পেলে আমরা স্থায়ীভাবে নদীভাঙনরোধে কাজ করতে পারব।

হাসিব আল আমিন/এসপি