উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা বেগম

সাংবাদিককে মামলায় জড়ানোর হুমকি দেওয়া নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা বেগমকে শোকজ করেছেন জেলা প্রশাসক। একইসঙ্গে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) রাত পৌনে ৮টার দিকে নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

জেলা প্রশাসক বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। কোনো দ্বায়িত্বশীল পদে থেকে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া সঠিক হয়নি। কেন তিনি এমন বক্তব্য দিলেন এবং পরে সাংবাদিকের সঙ্গে এমন আচরণ করলেন সেজন্য তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

তবে ইউএনও মাহমুদা বেগম বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাকে মৌখিকভাবে সতর্ক করেছেন। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি কোনো শোকজ নোটিশ পাননি বলে জানান।

এর আগে, গত শনিবার ভোররাতে উপজেলার বলাইশিমুল গ্রামের শতবর্ষী সরকারি খেলার মাঠের কিছু অংশের শ্রেণি পরিবর্তন করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মাণাধীন ঘরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে ওইদিন বিকালে এক প্রেসব্রিফিং করেন ইউএনও। প্রেসব্রিফিং দেওয়া ইউএনওর বক্তব্য ভিডিও ধারণ করেন দৈনিক সংবাদ ও ইংরেজি অবজারভারের প্রতিনিধি এবং কেন্দুয়া প্রেসক্লাবের সদস্য হুমায়ূন কবীর। পরে তিনি সেই ভিডিও তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করলে সন্ধ্যায় ইউএনও ওই সাংবাদিককে ফোন করে আশ্রয়ণের ঘরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মামলায় জড়ানোর হুমকি দেন।

এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে কেন্দুয়া প্রেসক্লাব কল্যাণ ট্রাস্টের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে গিয়ে উপস্থিত হন সংগঠনটির উপদেষ্টা ইউএনও মাহমুদা বেগম। সভায় সাংবাদিক হুমায়ূন কবীরও উপস্থিত ছিলেন। সভায় ইউএনও মাহমুদা বেগম সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনার একপর্যায়ে তার এমন আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন বলে নিশ্চিত করেন সাংবাদিক হুমায়ূন। 

ইউএনও মাহমুদা বেগম বলেন, কোনো বক্তব্য এডিট করে দিলে সেটি বিভ্রান্ত হয়। ফেসবুকে দেওয়ায় আমি ব্রিবত হই। সাংবাদিক যেটি দিয়েছেন সেটি ফেসবুকে দেওয়াটা দায়িত্বশীলের কাজ নয়। তাদের ক্লাবে অন্য একটি মতবিনিময় অর্থাৎ আমি তাদের উপদেষ্টা হিসেবে কল্যাণ ট্রাস্টের সভা ছিল। সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা আমাকে বলেছেন অবচেতন মনে কষ্ট পেয়ে থাকলে দুঃখিত হয়েছেন। আমিও বলতে চাই এখানে ভুল বোঝাবুঝির কিছু নেই। আমি সরকারের কাজ করতে গিয়ে রোষানলে পড়েছি। আর যেন সাংবাদিক এবং আমাকে বিভ্রান্ত হতে না হয় সেটি সবাইকে দেখার অনুরোধ করেন তিনি।

জানা গেছে, সম্প্রতি উপজেলার বলাইশিমুল খেলার মাঠের পাশে দখল হয়ে থাকা উদ্ধারকৃত জমিতে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের নির্মাণাধীন ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় ইউএনও মাহমুদা বেগমের আয়োজনে সংবাদ সম্মেলন করার একটি বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুকের ব্যক্তিগত টাইমলাইনে শেয়ার করেছিলেন হুমায়ূন কবীর। তারপরই মোবাইল ফোনে ইউএনও তাকে মামলায় জড়ানোর ‘হুমকি’ দেন। পরে সেই অডিও রেকর্ড ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। 

জানা গেছে, কেন্দুয়ার শতবর্ষী বলাইশিমুল মাঠে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রী উপহারের ঘর নির্মাণকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের সঙ্গে প্রশাসনের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। সেখানে পুলিশি প্রহরায় ঘরের নির্মাণকাজ চলমান রাখা হয়। এর মধ্যেই গত শনিবার ভোরে সেখানকার দুটি ঘরের চালে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ওইদিন বিকেলে এ নিয়ে নিজের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ইউএনও মাহমুদা বেগম। সেই সংবাদ সম্মেলনে ঘরে আগুন দেওয়ার জন্য বলাইশিমুল মাঠ রক্ষার আন্দোলনকারীদের তিনি দোষারোপ করেন। এর পেছনে স্থানীয় একজন সাবেক সংসদ সদস্য, একজন ‘মনোনয়ন প্রত্যাশী’ আওয়ামী লীগ নেতার ‘হাত’ রয়েছে বলেও গোয়েন্দা সংস্থার বরাতে তিনি অভিযোগ করেন।

কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম এবং কেন্দুয়া থানা পুলিশের ওসি আলী হোসেন এ সময় মঞ্চে ছিলেন। ইউএনও মাহমুদা বেগম বলেন, সরকারি দলের কিছু লোক, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, বামদল সবাই মিলে দূরভীসন্ধিমূলক ষড়যন্ত্র করছে। আমরা প্রশাসন অনেক ধৈর্য্য ধরেছি। আর নয়। দরকার হলে পুরো বলাইশিমুল ইউনিয়নকে গ্রেপ্তার করব। এটা হল আমাদের সিদ্ধান্ত। কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেব না।

এই বক্তব্যের ভিডিওই নিজের ফেসবুকে দিয়েছিলেন দৈনিক সংবাদের প্রতিনিধি ও কেন্দুয়া উপজেলা প্রেসক্লাবের সদস্য হুমায়ূন কবীর। তারপরই তিনি ইউএনওর ফোন পান বলে কেন্দুয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী চৌধুরী কাজল নিশ্চিত করেছেন।

মো. জিয়াউর রহমান/এমএএস