‘পাট ভালোই হইছিল, পানির অভাবে ক্ষতি হয়া গেল’
‘আগে তো জ্বালায় থাকতাম বিছাপোকা নিয়া। এবার সেই সমস্যা না থাকলেও পানির অভাবে সোনার পাট জাগ দিতে পারলাম না ভালো পানিতে। পচা পানিতে জাগ দিয়া পাটের কালার হয়া গেল কালা। দাম পাইলাম না এজন্য। পাট তো ভালোই হইছিল,পানির অভাবে ক্ষতি হয়া গেল।’
এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ফুলসূতি ইউনিয়নের বাউতিপাড়া গ্রামের কৃষক হায়দার মোল্লা(৪৭)।
বিজ্ঞাপন
তিনি জানান, পানি সংকটে পাট জাগ দিতে না পারা এবং পচা পানিতে পাট জাগ দেওয়ার জন্য কিছু পাট ক্ষেতেই পড়ে থেকে লালচে হয়ে গেছে। অনেকে পাট কেটে বাধ্য হয়ে অপরিষ্কার পানিতে জাগ দেওয়ার ফলে কালচে রঙের আকার ধারণ করেছে পাটের আঁশ। যে পাটের বাজারমূল্য কম। এজন্য লম্বা ও আঁশে পরিপুষ্ট হলেও ফরিদপুরের পাটচাষিরা পানির অভাবে জাগ দিতে না পারায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
সরেজমিনে ফরিদপুরের কয়েকটি এলাকা ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেসব জমিতে পাট আবাদ করা হয়, সেসব জমিতেই জুলাইয়ের শুরুর দিকে পানি চলে আসে। তখন জমির পাট কেটে সেখানেই জাগ দেওয়া থেকে আঁশ ছাড়ানো সবকিছুই করেন কৃষকরা। এবার পানি না আসায় জাগ দিতে হয়েছে পার্শ্ববর্তী কুমার নদে। যেজন্য ক্ষেত থেকে পাট কেটে তা রাস্তায় এনে নসিমন এবং ভ্যানে করে নদে নিতে দৈনিক মজুরিভিত্তিক ৭০০ টাকার কৃষিশ্রমিক দিয়ে নদে পাট নিতে অন্তত বিঘা প্রতি খরচ বেড়েছে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা।
বিজ্ঞাপন
সালথার মাঝারদিয়া এলাকার পাটচাষী রনি (২৫) বলেন, পাট এবার খুব ভালো হয়েছিল। তবে পানি না থাকায় আমাদের বিঘা প্রতি আয় কমেছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পাট উৎপাদনের দিক থেকে ফরিদপুরের উপজেলাগুলোর মধ্যে এগিয়ে আছে সালথা। এরপর নগরকান্দা উপজেলার অবস্থান। এ জেলার ৯টি উপজেলায় চলতি অর্থবছরে (২০২২-২০২৩) পাটের আবাদ হয়েছে ৮৫ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হযরত আলী বলেন, এ বছর জেলায় পাটের আবাদ ভালো হলেও কৃষক পানি সংকটের কারণে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল। এ সমস্যা না থাকলে পাটের আঁশের মান আরও ভালো হতো এবং কৃষকও আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারতো।
জহির হোসেন/আরএআর