নিপা বাড়ৈকে লেখাপড়া করাবেন, এমন আশ্বাস দিয়ে নিয়েছিলেন চিকিৎসক সিএইচ রবিন। লেখাপড়ার পাশাপাশি হালকা কিছু কাজ করে স্ত্রী রা‌খি দাসকে সহায়তা করবে। কিন্তু ঢাকায় নেওয়ার পরই নিপা বাড়ৈর লেখাপড়ার স্বপ্ন ধুলিসাৎ হয়ে যায়। সাহায্যের নামে ঘরের সব কাজ করতে হতো খুব ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত।

একজন চিকিৎসকের পরিবারে এমন ঘটনা ঘটবে, তা কল্পনাও করতে পারছেন না বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের বাসিন্দা ও চিকিৎসক রবিনের প্রতিবেশীরা।

এ বিষয়ে কথা হয় এক যুবকের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্ত্রী ভুল করে যদি মারধরও করে থাকে, একজন চিকিৎসক হয়ে রবিন তার চিকিৎসা করাতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেটা না করে মেয়েটাকে লোক মারফত এলাকায় চায়ের দাকানের সামনে ফেলে গেছেন।

নির্যাতিত নিপা বাড়ৈর জ্যাঠিমা মুক্তি বাড়ৈ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছয় মাস ধরে মারধর করা হয়েছে। মাঝেমধ্যে নিপা মোবাইলে কথা বলত, কিন্তু এসব কখনো বলতে পারেনি। এখন জেনেছি, আমাদের সঙ্গে নিপা যখন মোবাইলে কথা বলত, তখন চিকিৎসকের স্ত্রী নিপার গলায় চাকু ধরে ভয় দেখাত।

ওদিকে নিপা জানিয়েছে আরও নির্মমতার কথা। দিনে তিন বেলা খাবারের মধ্যে মাত্র এক বেলা খেতে দিত। সকালে ডা. সিএইচ রবিন ও তার স্ত্রী শিখা সাহা রুটি খেয়ে উদ্বৃত্ত থাকলে অর্ধেকটা বা তারও কম খেতে দিত।

চিকিৎসাধীন নির্যাতনের শিকার নিপা বাড়ৈ

 

নিপা ঢাকা পোস্টকে জানায়, চিকিৎসক দম্পতি খাওয়ার পর রুটি না থাকলে সকালে খেতে দিতেন না। দুপুরে ভাত খেতে দিতেন। কিন্তু রাতে কিছু খেতে দিতেন না। তারা সারা দিন কাজ করাতেন উল্লেখ করে নিপা বলে, কাজে ভুল হলেই চাকু, খুন্তি দিয়ে গলা চেপে ধরে মারধর করতেন। মাথা ধরে দেয়ালের সঙ্গে আঘাত করতেন।

উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লে‌ক্সের চিকিৎসক শামসু‌দ্দোহা তৌ‌হিদ ঢাকা পোস্টকে ব‌লেন, শিশুটির শরীরে পুরোনো অনেক দাগ আছে। আঘাতের চিহ্নগুলো দেখলে বোঝা যায়, অনেক দিন ধরেই তাকে নির্যাতন করা হয়ে আসছিল। তবে তার (নিপা বাড়ৈ) মাথায় সর্বশেষ যে বড় ক্ষতটি আছে সেটি সম্ভবত পাঁচ-ছয় দিন আগের হবে। নখ দিয়েও শিশুটিকে অত্যাচার করা হতো। গলায়, মুখে, পিঠে,; সারা শরীরে আগাতের চিহ্ন রয়েছে শিশুটির।

উজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আপতত জানতে পেরেছি চিকিৎসকের বাসা ঢাকার শ্যামলীতে। কিন্তু সঠিক কোন বাসাটি, তা শনাক্ত করা যায়নি। বাসার ঠিকানা পেলেই সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করা হবে।

প্রসঙ্গত, রাজধানীর শের-ই-বাংলা নগরে অবস্থিত জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) অর্থোপেডিক ও ট্রমা বি‌শেষজ্ঞ ডা. সিএইচ রবিনের বাসায় ছয় মাস আগে গৃহকর্মী হিসেবে নেওয়া হয় বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের জামবাড়ি গ্রামের প্রতিবন্ধী ননী বাড়ৈর ১১ বছর বয়সী মেয়ে নিপা বাড়ৈকে।

সেখানে দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতনের পর শিশুটিকে ২৩ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত তিনটার দিকে ডা. সিএইচ রবিনের চেম্বারের সহযোগী বাসু হালদারকে দিয়ে ফেলে রেখে যাওয়া হয়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ নিপা বাড়ৈকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়। বর্তমানে শিশুটি উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান /এনএ