নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলায় মাদরাসার অধ্যক্ষ এ এম এম মুহিববুল্লাহকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন উপজেলার বিভিন্ন মাদরাসার ৩৩ জন শিক্ষক। মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা বেগমের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত এক আবেদনের মাধ্যমে এ বিচারের দাবি জানান তারা।

এ বিষয়ে কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা বেগম বলেন, মাদরাসার শিক্ষকদের লিখিত আবেদনটি পাওয়ামাত্রই জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে পাঠানো হয়েছে।

জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত ওই আবেদনে মাদরাসা শিক্ষকরা উল্লেখ করেন, সোমবার (২২ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে মাদরাসায় যাওয়ার পথে মডেল বাজার মোড়ে অধ্যক্ষ এ এম এম মুহিববুল্লাহ ওপর দুর্বৃত্তরা হামলা করে। এতে তিনি মারাত্মক আহত হন। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন উপজেলার সব শিক্ষক সমাজ, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি গ্রহণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

এদিকে মঙ্গলবার সকালে মনকান্দা এমইউ আলিম মাদরাসার শিক্ষার্থীরা মাদরাসায় গিয়ে এ ঘটনার প্রতিবাদে ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেয়। পরে কেন্দুয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) জুনাঈদ আফ্রাদ ও কেন্দুয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলী হোসেন ওই মাদরাসায় গিয়ে শিক্ষার্থীদের ন্যায় বিচারের আশ্বাস দিলে তারা ক্লাসে ফিরে যায়।

এ ব্যাপারে কেন্দুয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলী হোসেন বলেন, অধ্যক্ষের ওপর হামলার ঘটনায় আজ মঙ্গলবার ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৮ থেকে ১০ জনের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষ নিজেই বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

আরও পড়ুন : শোকজ করায় অধ্যক্ষকে পেটালেন হিসাব সহকারী

শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, এমন কিছু ঘটেনি। আমরা সেখানে এমনিতেই তাদের সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম।

পুলিশ, আহত অধ্যক্ষ, মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে মনকান্দা এমইউ আলিম মাদরাসায় হিসাব সহকারী পদে চাকরি হওয়ার পর থেকেই কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকতেন গন্ডা ইউনিয়নের গাড়াদিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর ভূইয়া জুয়েল। এরই মধ্যে তিনি একটি হত্যা মামলার আসামি হন। এ অবস্থায় মাদরাসা কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে এবং গত ২০ আগস্ট তাকে শোকজ করে। এর জের ধরে অধ্যক্ষ মুহিববুল্লাহকে হুমকি দিয়ে আসছিলেন জুয়েল।

গতকাল সোমবার সকাল ১০টার দিকে মাদরাসায় যাওয়ার পথে মডেল বাজার মোড়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মুহিববুল্লাহর ওপর হামলা চালান জুয়েল ও তার লোকজন। এ সময় মুহিববুল্লাহকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করে তার সঙ্গে থাকা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ মোটরসাইকেলের চাবি ছিনিয়ে নেয় হামলাকারীরা।

পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন। তিনি বর্তমানে ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর ভূইয়া জুয়েল অধ্যক্ষকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই। উল্টো অভিযোগ করে জুয়েল বলেন, ২০২১ সালের ১০ জুলাই আমাকে অন্যায়ভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং গত ২০ আগস্ট শোকজ করা হয়। তারা আমাকে মাদরাসা থেকে বের করে দিতে ষড়যন্ত্র করছে।

মো. জিয়াউর রহমান/এনএ