দীর্ঘ প্রবাস জীবনের উপার্জন উত্তরা ব্যাংকের গাজীপুরের জয়দেবপুর শাখার সঞ্চয়ী হিসাব নম্বরে জমা রেখেছিলেন মো. শাহজাহান মোল্লা। গত ১৪ আগস্ট তার ওই হিসাব নম্বর থেকে অন্য দুটি অ্যাকাউন্টে ৮ লাখ ও ১০ লাখ টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গ্রাহক শাহজাহান কাতার থেকে তথ্য জানতে চাইলে হিসাবে গরমিল দেখতে পেয়ে ভাইকে দিয়ে হিসাব নম্বরের স্টেটমেন্ট তুলে টাকা খোয়া যাওয়ার বিষয়টি জেনে বাসন থানায় অভিযোগ করেন।

গত ১৪ আগস্ট টাকা সরিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটলেও বিষয়টি ২২ আগস্ট জানাজানি হয়। এ ঘটনায় পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে উত্তরা ব্যাংক।

কাতার থেকে মোবাইল ফোনে প্রবাসী মো. শাহজাহান মোল্লা জানান, ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর গাজীপুরের উত্তরা ব্যাংকের চান্দনা চৌরাস্তা অবস্থিত জয়দেবপুর শাখায় একটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলেন তিনি। যার হিসাব নং- ১৬৬৯ ১১১০০১১৮৩৭৬। প্রবাসের উপার্জন তিনি বৈধভাবে ওই হিসাব নম্বরে জমা করতেন। গত ১১ আগস্ট তিনি ওই ব্যাংক হিসাবে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৩ টাকা জমা করেছেন। গত ১৪ আগস্ট তিনি ব্যাংকে খবর নিয়ে জানতে পারেন তার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।

পরে দেশে থাকা তার ভাই জাহাঙ্গীর আলমের মাধ্যমে ব্যাংক স্টেটমেন্ট তোলেন। সেখানে তিনি দেখতে পান গত ১৪ আগস্ট তার অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ডস ট্রান্সফার নেটওয়ার্কের (বিইএফটিএন) মাধ্যমে সিটি ব্যাংকের সাতক্ষীরা শাখার মেঘনা এন্টারপ্রাইজের অ্যাকাউন্টে ৮ লাখ ও ওই দিন একইভাবে সিটি ব্যাংকের জয়পাড়া এসএমই শাখার সুমাইয়া নামে একটি হিসাব নম্বরে আরও ১০ লাখ টাকা পাঠানো হয়। পরে এ ঘটনায় ওই প্রবাসীর ভাই জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা বাদী হয়ে বাসন থানায় অভিযোগ করেন।  

এ ব্যাপারে উত্তরা ব্যাংকের জয়দেবপুর শাখার ব্যবস্থাপক স্কাইল্যাব চৌধুরী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা না বলার জন্য একটা সার্কুলার জারি করা হয়েছে। তাই এ বিষয়ে আমরা কোনো কথা বলব না। তবে এ ঘটনা তদন্তে ঢাকা ও গাজীপুর জোনাল অফিস থেকে পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

ভুক্তভোগী প্রবাসীর ভাই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার ভাই এখনো কাতার আছেন। সাধারণ একজন গ্রাহক ব্যাংক থেকে সামান্য টাকা তুলতেই ছবিসহ যাবতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করতে হয়, ব্যাংকে সংরক্ষিত ছবিসহ স্বাক্ষর যাচাই বাছাই ও ফোন কলে নিশ্চিত হতে হয়। একইদিন ব্যাংকে এত বড় দুটি লেনদেন করলেন কোনো ধরনের নিয়ম নীতি না মেনেই। ব্যাংক ব্যবস্থাপককে জানানোর পর তিনি নানা কথা বলে ঘুরাতে থাকেন। কোনো সমাধান দিচ্ছিলেন না।

তিনি বলেন, এমন কাজে ব্যাংকের কর্মকর্তারা অব্যশই জড়িত আছেন। তাদের ছাড়া এ ধরনের কাজ করা সম্ভব না। দ্রুত টাকা ফিরিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপক।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (ডিবি-মিডিয়া) মো. আবু নাঈম নয়ন বলেন, অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তে সত্যতা মিললে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিহাব খান/আরএআর