ফরিদপুরে অস্ত্র নিয়ে মহাসড়কে মহড়ার ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার (২৬ আগস্ট) রাত থেকে রোববার (২৮ আগস্ট) সকাল পর্যন্ত ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানকালে দুটি রাম দা, একটি বড় ছুরি ও একটি লোহার রড জব্দ করা হয়।

এ ঘটনায় কানাইপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাব্বিরসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১০ জনকে আসামি করে রোববার ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন কানাইপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি এএফএম আসলাম (২৮)।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- কানাইপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়নের কাশিমাবাদ  গ্রামের সাব্বির (২৪), একই গ্রামের নাজমুল (২৪), পাশের কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের ভোলাবাজ গ্রামের মো. সাগর বেপারী (২৫), একই গ্রামের মো. রাকিব খান (২২) এবং কানাইপুর ইউনিয়নের ভাটি কানাইপুর গ্রামের তুষার (২৩)।

এ নিয়ে দুপুর আড়াইটার দিকে জেলা পুলিশের উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, কানাইপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে গত বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) ফরিদপুর সদরের কানাইপুর বাজার সংলগ্ন ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের একাংশ সশস্ত্র মহড়া দিয়েছে। কানাইপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির ও থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সৌরভ মিলে একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেন। অপর গ্রুপের নেতৃত্ব দেন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম আসলাম এবং ছাত্রলীগ কর্মী সোহাগ। এই দুই গ্রুপের বিরোধকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও ভয়ভীতি দেখানোর জন্য মহড়া দেওয়া হয়। মহড়ার মাধ্যমে আসলাম ও সোহাগকে ভয় দেখানোর জন্য থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সৌরভ স্থানীয় সন্ত্রাসী খায়রুজ্জামান ওরফে খাজা গ্রুপের দিদার, শহীদ, সোহেলসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজনকে নিয়ে এসে আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে মহাসড়কে দেশীয় অস্ত্র সজ্জিত হয়ে মহড়া দেন। 

পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান বলেন,  রাজনীতির নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যারা করে এবং রাজনীতিতে যারা দুর্বৃত্তায়ন করে তাদের প্রতিহত করা হবে। কেননা রাজনীতি ও সন্ত্রাস একসঙ্গে চলতে দেওয়া হবে না। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে সশস্ত্র মহড়ার ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা করা হয়েছে এবং এ মামলার আসামি হিসেবে যারা জড়িত ভিডিও ফুটেজ ধরে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত এ ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন তাদের স্থান হবে কারাগারে।

তিনি আরও বলেন, ফরিদপুর শহরে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালালে কাউকে ন্যূনতম প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সকল অভিযান চলমান থাকবে এবং আরও বেগবান করা হবে। ফরিদপুরের মাটিতে সন্ত্রাসীদের কোনো জায়গা হবে না।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) জামাল পাশা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহাবুব করিম বলেন, গ্রেপ্তারকৃত পাঁচজনের প্রত্যেকের পাঁচ দিন করে রিমান্ড চেয়ে বিকেলে ফরিদপুরের এক নম্বর আমলি আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত রিমান্ডের শুনানির তারিখ পরে নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত দিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

জহির হোসেন/আরএআর