রাজশাহী এখন দুর্ভোগের নগরী। ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে অটোরিকশা বন্ধ রেখে দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলনে নেমেছে চালক-মালিকরা। প্রথম দিন রিকশা চললেও দ্বিতীয় দিন সড়কে কমেছে রিকশা। ফলে দুর্ভোগ সঙ্গে নিয়ে সকাল শুরু হয় নগরবাসীর। তবে জনদুর্ভোগ কমাতে সোমবার (২৯ আগস্ট) সকাল থেকে সড়কে নেমেছে বাস।

রাজশাহী বিমানবন্দর থেকে সাহেববাজার এবং কাটাখালী থেকে কোর্ট পর্যন্ত দুটি রুটে এসব বাস চলাচল করছে। অটোরিকশার ভাড়ায় গন্তব্যে পাড়ি দিচ্ছেন যাত্রীরা। এতে প্রথম দিনের চেয়ে পথের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমেছে। 

এদিকে ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে রোববার (২৮ আগস্ট) ভোর থেকে অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করে দেন মালিক ও চালকরা। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই এমন কাণ্ডে বিপাকে পড়েন নগরবাসী। ওই দিন যানবাহন না পেয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা। অফিসগামী লোকজন এবং স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদেরও পড়তে হয়েছে চরম ভোগান্তিতে। বাদ যাননি রোগীরাও। অটোরিকশা থেকে নামিয়ে চালকদের হেনস্থা করতেও দেখা আন্দোলনকারীদের। 

পরিবহন সংকটে যাত্রীদের পকেট কেটেছেন রিকশাচালকরাও। গন্তব্যে পাড়ি দিতে বাড়তি ভাড়াও গুনতে হয়েছে।ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে রোববার নগরভবনে গিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান না থাকায় তাৎক্ষণিক ঘোষণা আসেনি। বিষয়টি নিষ্পতিতে সোমবার বিকেল ৩টার দিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে মেয়রের। 

এদিকে দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত অটোরিকশা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তবে শুরু থেকে নগরবাসীকে জিম্মি না করার অনুরোধ জানিয়েছে নগর কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, ৯৬ দশমিক ৭২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের রাজশাহী নগরীতে প্রায় ১৬ লাখ লোকের বাস। গণপরিবহন বলতে ভরসা কেবল ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা।

সিটি কর্পোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১০ হাজার অটোরিকশা এবং ৫ হাজার রিকশা চলাচল করে নগরীতে। কিন্তু চলাচলকারী রিকশা ও অটোরিকশার সংখ্যা এর চেয়েও কয়েকগুণ বেশি। 

রিকশা-অটোরিকশার নিবন্ধনের পাশাপাশি চালকদেরও নিবন্ধন দেয় সিটি কর্পোরেশন। তবে এসব যানবাহনে নিয়ন্ত্রণ নেই রাসিকের। ভাড়া নির্ধারণ করা থাকলেও ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলে সর্বত্র।

এর মধ্যেই ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে নগরবাসীকে জিম্মি করে বসেন অটোরিকশা মালিক ও চালকরা। এই পরিস্থিতিতে নগরীতে সিটি সার্ভিস বাস নামানোর দাবি জানিয়েছেন নগরীর বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ। তবে নগরীতে এখনই সিটি বাস সার্ভিস চালুর নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন রাজশাহী বিভাগীয় সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি সাফকাত মঞ্জুর বিপ্লব।

তিনি বলেন, জনদুর্ভোগ লাঘবে আপাতত নগরীর দুটি রুটে ৩০টি যাত্রীবাহী বাস নামানো হয়েছে। এগুলো অটোরিকশার ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করবে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন, নগর পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেই এসব বাস নামানো হয়েছে। সিটি সার্ভিস হিসেবে বাস নামানো গেলে নগরীর যানজট অনেকাংশে কমে যাবে। 

নগরীতে সিটি সাার্ভিস চালুর বিষয়ে জানতে চাইলে এই পরিবহন মালিক নেতা বলেন, রাজশাহী ছোট নগরী। এখানে সিটি সার্ভিস হিসেবে বাস চালু করা লাভজনক হবে না। তবে প্রতিদিন আমাদের অন্তত কয়েকশ বাস বসে থাকে। এগুলো সিটি সার্ভিস হিসেবে নামানো যেতে পারে।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এসপি