সেতুটি নির্মাণের মাত্র ৩ মাসের মধ্যেই বন্যার পানির তোড়ে দুই পাশ বেঁকে দেবে যায়। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ ৫টি বছর। তবুও সংস্কার করা হয়নি সেতুটি। ভেঙে পড়া সেতুটিতে সংযোগ সড়ক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে নড়বড়ে কাঠের সাঁকো। এমন অবস্থাতেই সেতুর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ তিন ইউনিয়নের প্রায় ১৮ হাজার মানুষ।  

নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নের চরভরট গ্রামে অবস্থিত সেতুটি সংস্কারে প্রশাসনের কাছে দফায় দফায় আবেদন করা হলেও তা এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।

জানা গেছে, জলঢাকার ডাউয়াবাড়ি, গোলমুন্ডা ও শৌলমারী ইউনিয়নের প্রায় ১৮ হাজার মানুষের সঙ্গে উপজেলা শহরের সংযোগ রক্ষায় দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অর্থায়নে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি হয় সেতুটি। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০ ফুট। সেতুটি চালু হয় ২০১৭ সালের মে মাসে। একই বছরের ১০ আগস্ট বন্যার পানির স্রোতে সেতুটি দুই দিকে হেলে গিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এরপর থেকে কখনোই সংস্কার করা হয়নি সেতুটি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ৪০ ফুট দীর্ঘ সেতুটির দুই পাশ বেঁকে দেবে গেছে। ভাঙা সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়কে কাঠের সাঁকো দিয়ে চলছে মোটরসাইকেল, সাইকেল। তবে ঝুঁকি থাকায় বেশির ভাগ লোকজন হেঁটেই পার হচ্ছেন।

ডাউয়াবাড়ি চরভরট এলাকার বাসিন্দা আবু মুসা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সেতুটির কারণে ডাউয়াবাড়ি, গোলমুন্ডা ও শৌলমারী- এই তিন ইউনিয়নের মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। দীর্ঘদিন দুর্ভোগের পর এখানে একটা সেতু নির্মাণ হলেও তিন মাসের মধ্যে এটি দেবে গেছে। তারপর থেকে ৫-৬ বছর দুর্ভোগ পোহাচ্ছি। যদি এই ব্রিজটা হয়, আমাদের এলাকার রোগী থেকে শুরু করে লোকজনের যাতায়াতের মোটামুটি হারে সবাই সুবিধা ভোগ করবে।

একই এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এলাকায় কোনো সুযোগ-সুবিধা নাই। রাস্তাঘাট-ব্রিজ না থাকার কারণে এখানকার মানুষের বাজারে যেতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা। অনেক সময় অসুস্থ মানুষকে কাঁধে নিয়ে যেতে গিয়ে মারাও যায়। সময়মত স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছাতে পারে না। এই কারণে বাহিরের লোক আমাদের এলাকায় আসতে চায় না, আত্নীয়তা করতে চায় না।

চরভরট গ্রামের বাসিন্দা রমজান আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই ব্রিজের কারণে এখানে কেও বিয়ে করতে চায় না। আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না। বর্ষাকালে পানি বৃদ্ধি পেলে এই কাঠের পুল দিয়েও যাতায়াত করা যায় না।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ওলিয়ার রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন্যায় প্লাবিত হয়ে ব্রিজটা ভেঙে যাওয়ার পর আমরা কাঠের একটা ব্রিজ বানিয়ে পারাপার হইতেছি। কিন্তু পাকা একটা ব্রিজ খুবই দরকার। এই ব্রিজের পূর্ব পাশে সাড়ে আঠারো হাজার মানুষ বসবাস করে।  

দিনে কমপক্ষে দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ যাতায়াত করে এর ওপর দিয়ে। আমার অনুরোধ এ ব্রিজটা জরুরিভাবে প্রয়োজন। আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থারও খুব খারাপ অবস্থা, তারপরও চলে, কিন্তু ব্রিজটা না হলে চলে না।

জলঢাকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ময়নুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ত্রাণের ১২ লাখ টাকায় সেতুটি নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেতু চালু হয় ২০১৭ সালের মে মাসে। সেই সময় বন্যার পানিতে সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেতুটি বক্স ডিজাইনে তৈরি করা হয়েছে। এসব ডিজাইন এখন চলে না, বর্তমানে পাইলিং করে সেতু তৈরি করা হয়। 

ওই সেতুটি পাইলিং করে পূনরায় নির্মাণ করতে হবে। এ ছাড়া ওই সেতুটির সামনে মনছারের ঘাটের ব্রিজ নির্মাণে বুয়েটের স্পেশালাইজড টিম ভিজিবিলিটি যাচাইয়ের জন্য এসেছিলেন। সেটি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। আশা করছি সেই সেতু নির্মাণের সঙ্গে এটিরও নির্মাণ কাজ হয়ে যাবে।

আরআই