মানিকগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ২ হাজার ৫০০ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে সদর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবদুল লিটন বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

মামলায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ৩৩ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও বাকি আসামিরা বিএনপির অজ্ঞাত নেতা-কর্মী। সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির তিন নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হলেন- সদর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুল হক, যুবদলের নেতা সেলিম মোহাম্মদ এবং ছাত্রদল নেতা রুবেল মাহমুদ। পরে এই মামলায় তাদেরকে আসামি করা হয়।

শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রউফ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

পুলিশ এবং মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে সেওতা থেকে একটি মিছিল নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা জেলা শহরের খালপাড় এলাকায় শহীদ তজু সড়কে এসে অবস্থান নেন। সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন তারা। পুলিশের পক্ষ থেকে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার অনুরোধ করা হলেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা তোয়াক্কা করেন না। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিতে লিপ্ত হন তারা। 

পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে বাঁশি বাজিয়ে তাদের ওপর মৃদু লাঠিচার্জ করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে সদর থানার ওসি আবদুর রউফ ও কনস্টেবল শহীনসহ সাতজন পুলিশ সদস্য আহত হন। এছাড়া দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুরসহ ব্যাপক ক্ষতি করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনায় জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ৩৩ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে ২ হাজার ৫০০ নেতা-কর্মীকে আসামি করে রাতেই মামলা করে পুলিশ।

এদিকে এ মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা। তিনি বলেন, জ্বালানি তেলসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিএনপির কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিভিন্নভাবে বাধা দেন। বিভিন্ন স্থানে দলের নেতা-কর্মীদের মারধর করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে যাওয়ার সময় বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা বিএনপির নেতা-কর্মীদের মারধর করে। অথচ উল্টো বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক।

এ বিষয়ে সদর থানার ওসি আবদুর রউফ সরকার বলেন, গ্রেপ্তার তিন আসামিকে দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হবে। এ ছাড়া বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 

প্রসঙ্গত, বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার জেলা শহরের দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জেলা বিএনপি। অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শহরের উত্তর সেওতা এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে দিকে যাচ্ছিলেন। পথে খালপাড় এলাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়েন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশকে লক্ষ্য করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল ছুড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও পাঁচটি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে পুলিশ, সাংবাদিকসহ বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন।

সোহেল হোসেন/আরএআর