টাঙ্গাইল পৌরসভার একটি সড়কের মোড় প্রশস্তকরণের জন্য কাটা হচ্ছে শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানের পুরোনো গাছগুলো। উদ্যানের শোভাবর্ধন ও পাখিদের অভয়াশ্রমখ্যাত গাছগুলো কাটার ফলে পরিবেশে বিরূপ বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদীরা।

এদিকে টাঙ্গাইল শহীদ স্মৃতি উদ্যানের গাছ কাটার প্রতিবাদে মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন পরিবেশবাদী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, এক সময়ের নির্জন, পরিপাটি ও সবুজে ঘেরা টাঙ্গাইল শহরটি কয়েক দশকের মধ্যেই অপরিকল্পিত নগরায়নের পরিণত হয়েছে। বৃক্ষ নিধনের মাধ্যমে শহর এখন কংক্রিটের জঙ্গলে পরিণত হচ্ছে। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি জেলা সদর সড়ক যানজটমুক্ত করতে ক্লাব রোড মোড় প্রশস্ত করার জন্য শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যান ও টাঙ্গাইল ক্লাব এলাকার মধ্যবর্তী বেশ কিছু অর্ধশত বছরের গাছ কেটে ফেলেছে। 

এছাড়া উদ্যানের ভেতরে দলীয় ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান বিঘ্নিত হওয়ার অজুহাতে গাছের ডাল কেটে ন্যাড়া করে দিয়েছে। তবে পরিবেশবাদী এবং শহরের বাসিন্দারা প্রকল্পটি এমনভাবে করার জন্য আহ্বান করেছিলেন, যাতে উদ্যানের কোনো গাছ কাটার প্রয়োজন না হয়। কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষ তাতে কর্ণপাত করেননি। এর আগেও উন্নয়নের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ পার্কের অভ্যন্তরে একমাত্র প্রাচীন ভবনটি ভেঙে দিয়েছে।

শহীদ স্মৃতি উদ্যানে হাঁটতে আসা টাঙ্গাইল শহরের প্রবীণরা বলেন, স্বাধীনতার পর শহরের বিস্তৃতির সঙ্গে ধ্বংসাবশেষ শুরু হয় যখন নির্বিচারে বিভিন্ন স্থাপনা, দোকান ও মার্কেট নির্মাণ করা হয়। অর্ধ বছরের পুরাতন গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। শহরের ফুটপাট দখল করে ব্যবসা কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া উদ্যানে এখন হাঁটা যায় না। এটা এখন গাড়ি পাকিং করার জায়গা।

এদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পৌর উদ্যানের গাছ কাটা বন্ধ ও পার্কের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য ৮ দফা দাবি উল্লেখ করে পৌর কর্তৃপক্ষ বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন।

টাঙ্গাইল হাবিটের বিবিএর শিক্ষার্থী কানিজ ফাতেমা মীম বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে গাছ। সেই গাছই যদি উন্নয়নের নামে কেটে ফেলা হয়, তাহলে ভারসাম্য বজায় থাকবে না। উদ্যানের পুরাতন গাছগুলো কাটা হচ্ছে। গাছ না কেটে কিভাবে উন্নয়ন করা যায়, সেই পরিকল্পনা করে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন কাজ করা হোক। উদ্যানের গাছ কাটা বন্ধ না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাব।

সরকারি সাদ’ত বিশ্ববদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ফায়জুর রহমান শাকিল বলেন, অবৈধভাবে আর একটি গাছ তো দূরের কথা, গাছের ডালও কাটা যাবে না। পার্কিং থাকা সত্ত্বেও অবৈধ এবং ভারী যানবাহন পার্কিং উদ্যানে নিষিদ্ধ করতে হবে।

প্রফেসর সোহরাব উদ্দিন মেডিকেল ইন্সিস্টিউটের শিক্ষার্থী তামান্না ইমা বলেন, উদ্যানকে তার আগের রূপে ফিরিয়ে দিতে হবে। এর একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নতুন করে বৃক্ষরোপণ। উদ্যান নিরিবিলি বসার স্থান। এখানে মানুষের বসার ব্যবস্থা করতে হবে। উদ্যানের পরিবেশ যেন ভারসাম্যহীন এবং নোংরা না হয়ে পড়ে সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দিতে হবে।

কবি মাসুম ফেরদৌস জানান, কেন পৌরসভা কর্তৃপক্ষ শহরের একমাত্র পার্কের পুরোনো গাছ কাটা শুরু করেছেন? এর আগেও কর্তৃপক্ষ অসংখ্য দোকান ও মল নির্মাণ করে সমস্ত খোলা জায়গা এবং জলাশয় ভরাট করে শহরটিকে ধ্বংস করেছে। এভাবে চলতে থাকলে শহরটি আর বসবাসের উপযোগী থাকবে না।

পরিবেশ আন্দোলন কর্মী সাংবাদিক রতন আহমেদ সিদ্দিকী জানান, পৌরসভার মেয়রের সঙ্গে কথা বলে উদ্যানের পুরোনো গাছ কাটা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। কথা না শুনলে আরও কঠোর আন্দোলন করা হবে।

টাঙ্গাইলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুজ্জামান বলেন, পৌর উদ্যানের বেশ কিছু গাছের ডালপালা কাটার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ একটি আবেদন করেছিল। কিন্তু গাছের ডালপালা কাটার জন্য বন বিভাগ কোনো অনুমতি দিতে পারে না। মূলত জেলা প্রশাসন গাছের ডালপালা কাটার জন্য অনুমতি দিতে পারে। এছাড়া যদি কোনো গাছ অবৈধভাবে কাটা হয়, তবে তা পরিবহনের সময় বন বিভাগ গাছগুলো জব্দ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রানুয়ারা খাতুন বলেন, সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য পৌরসভার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের (ডিসির) নির্দেশে সহকারী কমিশনারকে দিয়ে (ভূমি) তদন্তের মাধ্যমে গাছগুলো কাটার জন্য উন্মুক্ত নিলাম ডাকা হয়। যথাযথ নিয়মের মাধ্যমেই গাছগুলো কাটা হয়েছে। তবে উদ্যানের ভেতরে গাছগুলোর ডালপালা কাটার জন্য কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি।  

টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক খান আলমগীর বলেন, যানজট কমাতে পৌর উদ্যান ও টাঙ্গাইল ক্লাবের মাঝামাঝি মোড়টি প্রশস্তকরণের জন্য চারটি গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে গাছগুলো কাটা হচ্ছে। এখানে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ গাছ কাটছে না। 

এছাড়া উদ্যানে বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম হয়। এতে গাছের ডালপালার কারণে উদ্যানে সামিয়ানা টাঙানো যায় না। ফলে ডালপালা কাটার জন্য বন বিভাগের অনুমতি সাপেক্ষে কাটা হয়েছে। শহরকে যানজটমুক্ত ও জনসাধারণের উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করা হবে।

অভিজিৎ ঘোষ/এসপি