ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জল সব ইতিহাস ছবি, স্মৃতিচিহ্ন এবং সরঞ্জামের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘরে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে, দুর্লভ ছবি এবং আলোকচিত্র দেখতে প্রতিদিনই এই জাদুঘরে শিক্ষার্থী ছাড়াও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ভিড় করেন।
  
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উজ্জীবিত রাখতে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস আর স্মৃতিচিহ্ন সম্বলিত গান্ধী আশ্রম ও জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে জামালপুরের মেলান্দহের প্রত্যন্ত অঞ্চল কাপাশহাটিয়া গ্রামে।

যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘর’। যেখানে স্থান পেয়েছে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও ৭১- এর মুক্তিযুদ্ধসহ ইতিহাসের নানা অনুসঙ্গ। এ গান্ধী আশ্রম ও মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘর নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের কাছে হয়ে উঠেছে ইতিহাস শিক্ষার পাঠশালা।


 
সেই গান্ধী আশ্রম ও মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘরের ট্রাস্টি হিল্লোল সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরাধীনতার গ্লানি মুছনের লক্ষে মহাত্মা গান্ধীর স্বদেশি চেতনাকে ধারণ করে ১৯৩৪ সালে জামালপুরের মেলান্দহের ঝাউগড়া ইউনিয়নের কাপাশ হাটিয়ার নিজ বাড়িতে গান্ধী আশ্রম গড়ে তোলেন তার দাদা নাসির উদ্দিন সরকার। তিনি ছিলেন কিংবদন্তী কৃষক নেতা ও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা। এর পাশাপাশি তিনি ছিলেন মহাত্মা গান্ধীর অন্ধভক্ত। দেশ ভাগের পর পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী ১৯৪৭ সালে আশ্রমটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়।

দীর্ঘ ৬০ বছর পর ২০০৭ সালে স্থানীয়দের উদ্যোগে টাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে ফের গড়ে তোলা হয় গান্ধী আশ্রম। এর সঙ্গে যুক্ত হয় ‘মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘর’। ধীরে ধীরে অবকাঠামোগত উন্নয়নও হচ্ছে এই গান্ধী আশ্রম ও মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘরটির।

তিনি বলেন, গান্ধী আশ্রমটি প্রতিষ্ঠাকালে অহিংসা ও সমাজ চেতনার কাজ করেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় এখনও প্রতিষ্ঠানটি এই কাজ করে যাচেছ। এর সঙ্গে নতুন প্রজন্মের সন্তানরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যেন আলোকিত হতে পারে, সেই কাজটিও এখানে করা হচ্ছে। এখানে শুধু জামালপুর না আশেপাশের বিভিন্ন জেলাসহ রাজধানী ঢাকা থেকেও সাধারণ দর্শনার্থীর পাশাপাশি বিশেষ ব্যক্তিবর্গও ঘুরতে আসেন।

মুক্তি সংগ্রামের এ জাদুঘর পরিদর্শনে আসেন বছরে অন্তত ৪০ হাজার দর্শনার্থী। তাদেরই একজন বাগবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী মিতু আক্তার। মিতু আক্তার বলেন, আগে আমাদের অনেক কিছুই অজানা ছিল। এখানে এসে আমরা অনেক কিছু জানতে পারলাম। মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘরটি না থাকলে হয়তো বা আমরা এসব জানতে পারতাম না।

আরেকজন দর্শনার্থী খাদেজা বলেন, এখানকার পরিবেশটা অনেক সুন্দর। এখানে এলে ভালো লাগে। আমরা সময় পেলেই এখানে আসি। এখানে আসার পর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের ছবি আর ইতিহাসগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠে। আমরা অনেক কিছু জানতে পারি।

বাগবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সোলায়মান কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই অজপাড়াগাঁয়ের মতো একটি জায়গায় এমন একটি প্রতিষ্ঠান আমাদের অবাক করে তোলে। আসলে কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা, চেষ্টা না থাকলে এটি করা সম্ভব হতো না। এই গান্ধী আশ্রম ও মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘর এই অঞ্চলের নতুন প্রজন্মের ইতিহাস শিক্ষার পাঠশালা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন পাঠশালা আমাদের দেশে আরও অনেকগুলো প্রয়োজন।

গান্ধী আশ্রম ও মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘরের পরিচালক ও ট্রাস্ট্রি উৎপল কান্তি ধর বলেন, মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস মানুষ যেন ভুলে না যান সে জন্যই এ জাদুঘর গড়ে তোলা হয়েছে। এই জাদুঘরটি পরবর্তীতে পুর্নাঙ্গ একটি সংগ্রহশালায় পরিণত হবে। বাঙালির যে গৌরব-গাথা, ইতিহাস-সংগ্রাম ও আনন্দ-বেদনা রয়েছে তা দেশবাসীর মধ্যে তুলে ধরবে। এসব দেখে তরুণ প্রজন্ম শিখবে এবং তাদের হৃদয়ে গেঁথে যাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।

আরআই