রংপুরের গঙ্গাচড়ায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একটি হত্যার ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে আরেকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আর সেই হত্যাকাণ্ড দেখে ফেলায় ছাড় দেওয়া হয়নি ১২ বছরের এক শিশুকেও। একে একে ঘটে তিনটি হত্যার ঘটনা।

রোমহর্ষক থ্রি-মার্ডারের এ ঘটনাটি গত বছরের এপ্রিল মাসে গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী ইউনিয়নের চর বাগডোগরায় সংঘটিত হয়ছিল। দেরিতে হলেও হত্যার নেপথ্যের রহস্য উদ্ঘাটনসহ ঘাতকদের গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।

সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রংপুর মহানগরীর কেরানীপাড়ায় রংপুর সিআইডির কার্যালয়ে বিশেষ পুলিশ সুপার আতাউর রহমান সংবাদ সম্মেলন করে আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ।

তিনি জানান, ২০২১ সালের এপ্রিলে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আজিজুল ইসলামকে হত্যা করে সাইফুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা। এ হত্যার ঘটনাকে ভিন্নখাতে নিতে সাইফুল তার ৮৬ বছর বয়সী শয্যাশয়ী চাচাতো ভাই রেয়াজুল ইসলামকে গলা কেটে ও পেটে বল্লম দিয়ে আঘাত করলে তারও মৃত্যু হয়। নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি দেখে ফেলে সাইফুল ইসলামের নাতনি ১২ বছরের মোনালিসা।

আতাউর রহমান বলেন, রেয়াজুল ইসলামকে হত্যার ঘটনার সাক্ষী ওই শিশুটিকেও হত্যার পরিকল্পনা করে সাইফুল ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। বিষয়টি বুঝতে পেরে মোনালিসাকে তিন মাস অন্য স্থানে রাখে তার পরিবার। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে ভেবে মোনালিসা বাড়ি ফিরে আসে। বাড়ি ফেরার পাঁচদিন পর মোনালিসার মরদেহ নিজ ঘরে দড়ি দিয়ে ফাঁস লাগানো অবস্থায় পাওয়া যায়। পরিবারের লোকজন এটিকে আত্মহত্যা ভেবে মামলা করেনি। কিন্তু ময়নাতদন্তে মোনালিসার মুখ থেকে রক্ত বের হতে এবং গলায় জখম দেখা যায়। পরে সিআইডি গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে, হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী মোনালিসাকেও সাইফুল এবং তার সহযোগীরা হত্যা করে ঝুলিয়ে রেখেছিল।

তিনি আরও জানান, মোনালিসা হত্যার ঘটনায় এক বছর পর এ বছরের ৪ আগস্ট অজ্ঞাতদের আসামি করে গঙ্গাচড়া থানায় মামলা করে নিহতের পরিবার। মামলার পর সিআইডি তদন্ত করে গত ৫ সেপ্টেম্বর চড়বাগডোগড়া গ্রাম থেকে সন্দেহভাজন আতিয়ার রহমানের স্ত্রী মোতাহারা বেগম (৪৫) ও অজিনুর রহমানের স্ত্রী ময়না বেগমকে (৩৫) আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

সিআইডি এ তিনটি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে। অন্যান্য আসামিরা গ্রেপ্তার হলেও মূল আসামি সাইফুল এখনো পলাতক রয়েছেন। তিনি বিভিন্ন মানুষের সিম কার্ড ব্যবহার করছেন এবং ঘনঘন স্থান পরিবর্তন করছেন বলে জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আতাউর রহমান। তবে তাকে আইনের আওতায় আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন বলে জানান তিনি। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর