গাজীপুরের শ্রীপুরে শীতলক্ষ্যার তীরে অবস্থিত বরমী নৌঘাটটি বর্জ্যের স্তূপে রূপ নিয়েছে। ময়লার স্তূপের দুর্গন্ধে নদী পারাপারের সময় মানুষের প্রচুর ভোগান্তি হচ্ছে। একইসঙ্গে অতিরিক্ত বর্জ্য নদীতে মেশায় দূষিত হচ্ছে শীতলক্ষ্যার পানি। দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষ ভোগান্তি পোহালেও এর সমাধানে কারো উদ্যোগ নেই। 

স্থানীয়রা জানান, শ্রীপুরের নদীকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র বরমী বাজার। প্রাচীনতম এ বাজার ঘিরে যেমন গড়ে উঠেছে দোকানপাট, তেমনি বাজারের সরকারি জায়গা দখল করে অবাধে গড়ে উঠছে বহুতল ভবন।

অনেকদিন ধরে বাজারের দোকানপাট ও বাসাবাড়ির গৃহস্থলির বর্জ্য, বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মেডিকেল বর্জ্যসহ নানা ধরনের বর্জ্য শীতলক্ষ্যার তীরে নৌঘাট ঘেঁষে ফেলা হচ্ছে। এতে সেখানে তৈরি হয়েছে ভাগাড়। বর্জ্যের কারণে নদীর পানিরও দূষণ বেড়েছে কয়েকগুণ। 

ভাগাড় তৈরির কারণে সরকারিভাবে নির্মিত নৌঘাটের ব্যবহার দিন দিন সীমিত হয়ে পড়ছে। এই নৌঘাটে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অর্ধশত নৌযান চলাচল করে। পণ্য আনা-নেওয়াসহ কয়েক হাজার যাত্রী এই নৌপথ ব্যবহার করে। এছাড়া প্রতি হাটবারে (বুধবার) এ সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় কয়েকগুণ।

বরমী নৌঘাটের ইজারাদার তৌফিক মিয়া বলেন, সরকার নৌযাত্রীদের কথা বিবেচনা করে অনেক টাকা খরচ করে তিনটি ঘাট নির্মাণ করেছেন। শৌচাগার, যাত্রী ছাউনিও তৈরি করে দিয়েছেন। তবে মূল সমস্যা হচ্ছে বর্জ্য। পঁচা, মরা প্রাণী ও নানা প্রকার প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর বস্তু নৌঘাট ঘিরে ফেলায় এখন তা স্তূপে পরিণত হয়েছে। উৎকট গন্ধে এই ঘাটে টেকা দায়। আমাদের দাবি, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এ বর্জ্য এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হোক।

বরমী ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাবরিনা আক্তার বলেন, আমার বাড়ি কাপাসিয়ার রায়েদ এলাকায়। প্রতিদিন আমাকে ঘাট ব্যবহার করতে হয়। এখানে যাওয়া-আসার সময় বর্জ্যের দুর্গন্ধে নাক চেপে পারাপার হতে হয়।

হারিয়াদী এলাকার ইব্রাহিম খলিল বলেন, বর্জ্যের কারণে নৌঘাটটি বর্তমানে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। দিন দিন এটি মানুষের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব বর্জ্য নদীর পানির সঙ্গে মিশে দূষণও বাড়িয়েছে। আগে স্থানীয়রা শীতলক্ষ্যা নদীতে গোসল ও মাছ ধরলেও এখন বাজারের আশপাশে দূষণের কারণে পানিতে নামা যায় না।

বরমী বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম সরকার বলেন, আশপাশে কোথাও ময়লা-আবর্জনা রাখার স্থান না থাকায়, বহুদিন ধরে বর্জ্য নদীর পাশেই ফেলা হচ্ছে। আমরা কয়েকবার সতর্ক করলেও কেউ শুনছে না। রাতের আঁধারে লোকচক্ষুর আড়ালে এখন ময়লা ফেলা হচ্ছে। তবে এবার আমরা উদ্যোগ নিয়েছি, নদীর তীর পরিষ্কার করা হবে। 

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) গাজীপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক হাসান ইউসুফ খান বলেন, এভাবে নদীর মধ্যে বর্জ্য ফেলার ঘটনা আইন অনুযায়ী ফৌজদারি অপরাধ। জেলা প্রশাসনের মাসিক সভায় এ বিষয়টি তোলা হলেও কেউ নজর দেননি। স্থানীয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। আর নৌঘাট ঘিরে ভোগান্তি তৈরি করা অসভ্য মানুষের কাজ। সবাই মিলে সচেতন হলে দূষণ ও ভোগান্তি উভয়ই লাঘব হবে।

বরমী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন বলেন, স্থানীয়দের নদীর তীরে নৌঘাট ঘিরে বর্জ্য না ফেলতে অনেকবার বলা হলেও কেউ শুনছেন না। এ ব্যাপারে বাজারের বনিক সমিতির সঙ্গে বসে সমাধানের চেষ্টা করা হবে। 

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, সরেজমিন পরিদর্শন করে বাজারের ইজারাদারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিহাব খান/এসপি