বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তে আবারও থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। এতে ফের আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা।

এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ব্যাপক গোলাগুলি শুরু হয়। রাখাইন রাজ্যের পাহাড় থেকে ছোড়া একটি মর্টার শেল এসে তুমব্রু সীমান্তের বিপরীতে শূন্যরেখায় পড়ে। এতে এক রোহিঙ্গা কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এক শিশুসহ পাঁচ রোহিঙ্গা আহত হয়েছেন।

মর্টার শেলে মারা যাওয়া কিশোরের নাম মো. ইকবাল (১৫)। সে শূন্য রেখার আশ্রয় শিবিরের রোহিঙ্গা মুনির আহমদের ছেলে। আহত পাঁচ রোহিঙ্গার মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- জাহিদ আলম (৩০), নবী হোসেন (২১), মো. আনাস (১৫) ও সাহদিয়া (৪)।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন ‍তুমব্রু রোহিঙ্গা ক্যাম্প কমিটির চেয়ারম্যান দিল মোহাম্মদ। তিনি বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। রাত ৮টার দিকে শূন্যরেখায় বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে এসে পড়ে তিনটি মর্টার শেল। ক্যাম্পের নিকটবর্তী এলাকায় এসে পড়ে আরও একটি মর্টার শেল। গুলির শব্দে আতঙ্কে আছেন আশ্রয় শিবিরের বাসিন্দারা।

তিনি আরও বলেন, কয়েক দিন ধরে চলা গোলাগুলি দুপুরের আগে থেমে যেত, কিন্তু আজ শনিবার দুপুরেও বন্ধ হয়নি। গোলাগুলি শুরু হওয়ায় নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আশ্রয় শিবিরের কাছাকাছি গোলাগুলি হওয়ায় আতঙ্ক বেশি। তবে আজ আকাশে ফাইটার জেট ও হেলিকপ্টার উড়তে দেখা যায়নি।

তুমব্রু এলাকার বাসিন্দা ও ঘুমধুম ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য দিল মোহাম্মদ ভুট্টু বলেন, তিন দিন ধরে সীমান্তে গোলাগুলি বন্ধ ছিল। আজ আবার ভোর সাড়ে ৫টা থেকে মিয়ানমারে গোলাগুলি হচ্ছে। গুলির বিকট শব্দ এ পারে আসছে। আতঙ্কে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেন না এলাকার মানুষ।

রোহিঙ্গা নেতাদের ধারণা, তিনদিন গোলাগুলি বন্ধ রেখে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছে মিয়ানমার। 

ঘুমধুম সীমান্তের তুমব্রু এলাকার কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী কখন গুলি ছোড়ে তার ঠিক-ঠিকানা নেই। তারা গুলি ছুড়লে জবাবদিহি করতে হয় না। তিন দিন গোলাগুলি বন্ধ থাকায় ঘুমধুমে বেশ কিছু কৃষক চাষাবাদে মাঠে নামলেও কাল থেকে কেউ নামছে না। সীমান্তে মাইন আতঙ্কে ভুগছেন চাষিরা।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, গত ১৩ আগস্ট থেকে তুমব্রু সীমান্তের বিপরীতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ওয়ালিডং ও খ্য মং সেক পাহাড়ে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) যুদ্ধ চলছে। এক মাসের বেশি সময় ধরে চলমান এই যুদ্ধ বন্ধের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। উল্টো ২৭১ কিলোমিটার স্থল ও জলসীমায় তৎপরতা বাড়াচ্ছে মিয়ানমার। তিন দিন ধরে সেন্ট মার্টিনের বিপরীতে (পূর্ব দিকে) মিয়ানমার জলসীমায় দেশটির তিনটি নৌবাহিনীর জাহাজ তৎপরতা শুরু করেছে। তবে সেখানে তৎপর আছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডও।

এসপি