দীর্ঘ দিন প্রবাসে থাকার পর আগস্ট মাসে দেশে ফিরেছেন মালয়েশিয়া প্রবাসী হেলাল। বাড়িতে এসে নতুন ঘর নির্মাণের জন্য ইটও কেনেন। ঘরের কাজ শেষ হলেই বিয়ে করার কথা ছিল। এর মধ্যে হেলালের জন্য পাত্রীও দেখা শুরু করেছিল পরিবার। কিন্তু ভাগ্যের নির্মমতায় নতুন ঘর তুলতে গিয়েই প্রাণ গেল হেলালের। কান্নাজড়িত কণ্ঠে এমনটাই বলছিলেন বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নিহত হেলালের মা। 

নিহত প্রবাসী মো. হেলাল (৩৫) বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের রায়ভোগ কদমতলা গ্রামের হারুন হাজীর ছেলে। নিহত অন্য দুজনও একই এলাকার বাসিন্দা। ছেলেকে কবরে রেখে এসে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন হেলালের বাবা।

হেলালের মা বলেন, আমার ছেলে দেশে ফিরেই বাড়ির কাজ শুরু করে। ঘর বানানোর জন্য ইট আনে। শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে নিজেই সব কাজ করত। ওর মামাতো ভাই ও বাড়ির পাশের আরও দুই চাচাত ভাইকে নিয়ে গতকাল পুরোনো ঘরের টিনের চাল খুলতে গিয়ে মরে গেল।

তিনি আরও বলেন, একসঙ্গে তিন মায়ের কোল খালি হয়ে গেল। আমার এই একটাই ছেলে ছিল। আশা ছিল ছেলেকে বিয়ে করাব, নাতি নাতনি নিয়ে বাকিটা জীবন কাটাব। কিন্তু ভাগ্যে এসব ছিল না হয়ত। 

এর আগে আজ বেলা সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় একটি স্কুলমাঠে একসঙ্গে নিহত তিনজনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পারিবারিক করবস্থানে তাদের দাফন করা হয়। এ সময় আত্মীয়স্বজন, জনপ্রতিনিধিসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। 

প্রসঙ্গত, বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের রায়ভোগ কদমতলা গ্রামের হারুন হাজীর ছেলে মো. হেলাল দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে মালয়েশিয়া প্রবাসী ছিলেন। গত মাসের ১১ তারিখ তিনি বাড়ি আসেন। এরপর নতুন পাকা ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এরপর গতকাল শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে মামাতো ভাই বেলায়েত, প্রতিবেশী চাচাত ভাই রবিউল ও আরিফকে নিয়ে পুরোনো ঘরটি অপসারণ করতে যান। এ সময় পাশে থাকা বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে ঘরের টিনে লেগে যায় চারজনই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। 

ঘটনাস্থলেই বেলায়েত, হেলাল ও রবিউল মারা যান। আরিফকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনরা। তার অবস্থা গুরুতর হলে পরে তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। 

খান নাঈম/এসপি