৯ বছর ধরে পরিত্যক্ত পড়ে আছে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম
গোপালগঞ্জের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম ৯ বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। অযত্ন- অবহেলায় ১০৪ কোটি টাকার স্টেডিয়ামটির এখন বেহাল দশা।
জানা গেছে, শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারির ছাদের প্লেনসিট বাতাসে উড়ে গেছে। ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি, বসার আসন নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে স্টেডিয়ামের ভিআইপি লাউঞ্জের অর্ধশতাধিক এসি, লিফট, গ্যালারির চেয়ার, বড় পর্দা, প্রেসবক্স, ফ্লাডলাইটসহ প্রয়োজনীয় অনেক কিছু। কয়েকটি ভবনে ধরেছে ফাটল। এখন সেগুলো হয়েছে মাদকসেবীদের আড্ডাস্থল।
বিজ্ঞাপন
১২ হাজার দর্শকের ধারণক্ষমতার আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম হলেও অবকাঠামোগত সমস্যা ও খেলোয়াড়দের জন্য উন্নতমানের আবাসিক হোটেল না থাকার অজুহাতে ৯ বছর ধরে জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেট খেলা হয়নি শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। যার ফলে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে থাকতে স্টেডিয়ামটির বেহাল দশা।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টির ভেন্যু হিসেবে ১০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হয় শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্টেডিয়ামটিতে রয়েছে ভূগর্ভস্থ পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, পুরো ছাদযুক্ত গ্যালারি, বড় পর্দা, তিন দিকে পার্শ্ব পর্দা, ফ্লাডলাইট এবং প্রেসবক্স। রয়েছে সুইমিংপুল, বড় ব্যায়ামাগার, পৃথক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা এবং নারীদের জন্য ক্রীড়া কমপ্লেক্স।
উদ্বোধনের পরে বিসিবির একটি প্রতিনিধি দল পরিদর্শনে এলে অবকাঠামোগত সমস্যা ও খেলোয়াড়দের থাকার জন্য উন্নতমানের আবাসিক হোটেল না থাকার কারনে ভেন্যু বাতিল করে। এরপর থেকেই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
স্থানীয় এক খেলোয়াড় ঢাকা পোস্টকে বলেন, অযত্নে স্টেডিয়ামটির আজ এই অবস্থা। ৯ বছর ধরে স্টেডিয়ামে কোনো জাতীয় খেলা দেখলাম না। অবহেলায় নষ্ট হয়ে গেছে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি। সরকারের কাছে দাবি জানাই, স্টেডিয়ামটি সংস্কার করে আমাদের একটি খেলা উপহার দেওয়া হোক।
ক্রিকেটপ্রেমী নাহিন ঢাকা পোস্টকে বলে, আজ পর্যন্ত কোনো খেলা আমরা দেখতে পারিনি। আমি ক্রিকেটকে ভালোবাসি। এ জেলায় ক্রিকেট খেলা অনুষ্ঠিত হলে আমরা সরাসরি দেখতে পাব। স্টেডিয়ামের সব কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। দ্রুত স্টেডিয়ামটি সংস্কার করে আমাদের একটি খেলা উপহার দেওয়া হোক।
শেখ রাসেল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রায়হান বলেন, আমাদের স্টেডিয়ামে জাতীয় পর্যায়ের কোনো খেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। স্টেডিয়াম থাকার পরও কোনো খেলা না হওয়ায় আমরা ক্রিকেট থেকে আগ্রহ হারাচ্ছি। এ জেলা থেকে তৈরি হচ্ছে না নতুন কোনো খেলোয়াড়। স্টেডিয়ামের সব কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া চার দিকে নোংরা পরিবেশ ও মোটর গ্যারেজ গড়ে উঠায় সৌন্দর্য হারিয়েছে স্টেডিয়ামটি।
শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. জসিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গ্যালারির উপরের ছাদ, ভবনের জানালার কাচসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা ইতোমধ্যে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। আশা করি দ্রুত সংস্কার করা হবে।
জেলা প্রশাসক ও ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি শাহিদা সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্টেডিয়ামটি সংস্কারের বিষয়ে আমরা ইতামধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাঠিয়েছি। কিছু দিন আগে জাতীয় ক্রীড়া সংস্থা ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের একটি টিম এসে দেখে গেছে। আমাদের প্রস্তাবটি দ্রুত পাস হলে শিগগিরই আমরা মেরামতের কাজ শুরু করতে পারব।
এসপি