বগুড়ার-৭ আসনের সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলুর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলার সময় এমপিকে রক্ষা করতে গেলে তার ব্যক্তিগত সহকারী মো. সেলিম রেজাকে রড দিয়ে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বুধবার সকালে শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের হলরুমে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির সভায় যোগ দিতে যাওয়ার সময় ঘটনাটি ঘটেছে। অপরদিকে, পাল্টা অভিযোগ করেছেন শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সানোয়ার হোসেন সান্নু। 

তিনি বলেছেন, এমপি বাবলু তাকে পিস্তুল দেখিয়ে হত্যা করার হুমকি দিয়েছেন। তবে এ ঘটনায় কেউই থানায় কোনো অভিযোগ দেননি।
 
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, বুধবার উপজেলা পরিষদের আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির সভা ছিল। সকাল পৌনে ১০টায়  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সংলগ্ন হলরুমে সভা শুরু হয়। সভা শুরু হওয়ার প্রায় ১৫ মিনিট পর বাইরে হট্টগোল শুরু হলে উপজেলা চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ছান্নুসহ অনেকে বের হয়ে দেখেন এমপি বাবলু এবং তার ব্যক্তিগত সহকারীর সঙ্গে যুবলীগ নেতাকর্মীদের ধস্তাধস্তি ও মারপিটের ঘটনা ঘটে। এতে তার ব্যাক্তগত সহকারী আহত হয়।

সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে তিনি দীর্ঘদিন কোনো সভায় উপস্থিত হতে পারেননি। বুধবার আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির সভায় অংশ নিতে তিনি উপজেলা পরিষদে যান। তবে তিনি পৌঁছানোর আগেই সভা শুরু হয়ে যায়। তখন তিনি ইউএনও আসিফ আহমেদের সঙ্গে কথা বলার জন্য তার কার্যালয়ের দরজার সামনে অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় ব্যক্তিগত সহকারী রেজা এবং গাড়ি চালকসহ কয়েকজন তার সঙ্গে ছিলেন। 

সকাল ১০টায় উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বাদশা আলমগীরসহ যুবলীগের ৪/৫ জন নেতা হঠাৎ করে ইউএনওর দরজার সামনে এসে তার ওপর চড়াও হয়। সঙ্গে থাকা লোকজন যখন আমাকে রক্ষার চেষ্টা চালায় তখন যুবলীগ নেতা বাদশা আলমগীর রড দিয়ে আমার ব্যাক্তিগত সহকারীর মাথায় আঘাত করে। এতে তার মাথা ফেটে যায়। এক পর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ছান্নু এসে আমাকে ধাক্কা দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ আমাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় এবং আহত সেলিম রেজাকে হাসপাতালে পাঠায়। আমি একজন সংসদ সদস্য। উপজেলা পরিষদে আমার ওপর হামলা চালানো হলো, কিন্তু তারপরও নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে দেখতে আসলেন না, খোঁজও নিলেন না।

এ ব্যাপারে শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা সোহরাব হোসেন ছান্নু জানান, এমপি রেজাউল করিম বাবলুর সঙ্গে আমার কিছুই হয়নি। উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে এমপির পিএসের ঝামেলা ছিল সেটা নিয়ে একটা হট্টগোল হয়েছে মাত্র। ঘটনার এক পর্যায়ে লাইসেন্সকৃত অস্ত্র হাতে নেন এমপি।

শাজাহানপুর উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বাদশা আলমগীর জানান, এমপি বাবলু কিংবা তার পিএসের ওপর হয়নি কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি কাবিখার কাজ নিয়ে ঝামেলা ছিল। সেটা নিয়েই কথা হয়েছে। এক পর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ছান্নু সেখানে এলে এমপি তার কোমরে থাকা রিভলবার বের করে গুলি করার হুমকি দেন। এ সময় সঙ্গে থাকা যুবলীগের নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে উঠলে তিনি পিস্তল লুকিয়ে ফেলেন। 

পিস্তল বের করে হুমকি দেওয়া নিয়ে সংসদ সদস্য বাবলু বলেন, আমি আত্মরক্ষার্থে আমার লাইসেন্স করা পিস্তল বের করেছিলাম।  কারণ, আমার ব্যাক্তিগত সহকারীকে রড দিয়ে আঘাতের পর আমার ওপরও তারা চড়াও হয়েছিল। সরকার আমাকে আত্মরক্ষার জন্য লাইসেন্স দিয়েছে। শুধু তাই নয়, ওই পিস্তল রক্ষাও আমার কর্তব্য। কারব, যদি ওটা ছিনিয়ে নিয়ে কোনো অঘটন ঘটায়।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আহাম্মেদের সঙ্গে কথা বলার জন্য তার ফোনে একাধিক কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

অন্যদিকে, ঘটনার পরপরই এমপি বাবলুর বিরুদ্ধে শাজাহানপুর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ বগুড়া সিরাজগঞ্জ মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।

শাজাহানপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এ ঘটনায় এখনো কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।  অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আলমগীর হোসেন/এমএএস