নৌকাডুবির পর সাঁতরে নদীর তীরে ফিরে আসা দিপু

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে। নিখোঁজদের উদ্ধারে কাজ শুরু করেছে রংপুর থেকে আসা ফায়ার সার্ভিস ডুবুরি দল। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপেই নৌকাটি ডুবে যায় বলে জানিয়েছেন বেঁচে ফেরা যাত্রীরা। 

রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। পরে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর রংপুর থেকে ডুবুরি দল এসে সন্ধ্যা ৬টার দিকে উদ্ধার কাজ শুরু করে। 

স্থানীয়রা জানান, মহালয়া উপলক্ষে দুপুরে বোদা, পাঁচপীর, মাড়েয়া, ব্যাঙহারি এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নৌকায় করে বদেশ্বরী মন্দিরে যাচ্ছিলেন। প্রায় শতাধিক যাত্রী নিয়ে নৌকাটি মাঝ নদীতে উল্টে যায়। এ সময় কিছু মানুষ সাঁতরে নদীর তীরে আসলেও ২৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপেই নৌকাটি ডুবে যায় বলে জানান বেঁচে ফেরা যাত্রীরা। 

নৌকাডুবির পর সাঁতরে নদীর তীরে ফিরে আসা দিপু বলেন, আমরা মহালয়া দেখার জন্য যাচ্ছিলাম। নদীর মাঝখানে যাওয়ার পর হঠাৎ করে নৌকা দুলতে থাকে। তারপর আমি নিচে পড়ে যাই। কিছুক্ষণ আমি কিছুই বুঝতে পারিনি। তারপর সাঁতার কাটলাম। আমি আমার নিজ হাতে তিনটা মরদেহ উদ্ধার করেছি। আরও কয়েকজনকে বাঁচিয়েছি। বেশি লোক নৌকায় নেওয়ায় নৌকাটা ডুবে যায়। ১০০ জনেরও বেশি লোক আমরা নৌকায় ছিলাম। 

আরেক যাত্রী তুরেণ বলেন, নতুন করে জীবন ফিরে পেয়েছি। নৌকাওয়ালা অতিরিক্ত লোক নেওয়ার কারণে এতগুলো মানুষের প্রাণ গেল আজ। আমার কয়েকজন আত্মীয়-স্বজনকে এখনো খুঁজে পাইনি।

নৌকাডুবিতে এখন পর্যন্ত মৃতরা হলেন- মৃতরা হলেন- বোদা উপজেলার মাড়েয়া ফুটকিবাড়ী এলাকার হেমন্তের মেয়ে কলি রানী (১৪), দেবীগঞ্জ শালডাঙা হাতিডোবার কার্তিক রায়ের স্ত্রী লক্ষ্মী রানী (২৫), কাবুল চন্দ্র রায়ের ছেলে দিপঙ্কর চন্দ্র রায় (৩) বোদার মাড়েয়া বামনপাড়া এলাকার সজিব চন্দ্র রায়ের মেয়ে প্রিয়ন্তী (২), দেবীগঞ্জের লক্ষ্মীগড় ডাঙাপাড়া এলাকার চন্ডি দাসের স্ত্রী প্রমিলা রানী (৫৫), দেবীগঞ্জ পশ্চিম শিকারপুর এলাকার কালি কান্তের ছেলে অমল চন্দ্র (৩৫), রবীন চন্দ্রের স্ত্রী তারা রানী (২৪), বোদার পাঁচপীর বংশীধর পূজারী এলাকার মৃত চুড়ামোহন রায়ের স্ত্রী ধনবালা (৫৭), রমেশ চন্দ্রের স্ত্রী সুমিত্রা রানী (৫৭), ময়দান দীঘি এলাকার বিলাশ চন্দ্রের স্ত্রী সফলতা রানী (৫৫), মাড়েয়া বামনহাট এলাকারর রমেশ চন্দ্রের স্ত্রী শিমলা রানী (৩৫), বোদার বড়শশী কুমারপাড়া এলাকার আহম্মদ আলীর ছেলে হাছান আলী (৫২), বোদা মাড়েয়া আলোকপাড়া এলাকার রমেশ চন্দ্র ও মিনুতি রানীর শিশু কন্যা উশোশী, দেবীগঞ্জের হাতিডুবা এলাকার নারায়ণের শিশু কন্যা তনুশী, বোদার পাচঁপীর মদনহার এলাকার রতন চন্দ্র ও শুতী রানীর শিশু কন্যা শ্রেয়শী, সাকোয়ার গড় দিঘী বাবু বাজার এলাকার ধর্ম নারায়ণের শিশু কন্যা প্রিয়ন্তী, বোদার মাড়েয়া এলাকার রবীন্দ্রের ছেলে বিলাশ চিন্দ্র, বোদা মাড়েয়া বামন হাট এলাকার নির্মল চন্দের স্ত্রী শোভা রানী (২৭) ও খুশি রানী নামে এক নারী। অপর দুজনের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, এ জেলার ইতিহাসে ভয়াবহ নৌকাডুবি এটি। এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার কাজ চলমান রয়েছে। মৃতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসন আহতদের চিকিৎসা খরচ বহন করবে। 

আরএআর