গুলিতে নয়, ইটের আঘাতে যুবদল কর্মী শহিদুল ইসলাম শাওনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছেন মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান আল মামুন। বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ দাবি করেন। তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল রিপোর্টে গুলিতে শাওনের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। 

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, ঘটনার দিন পুলিশকে লক্ষ্য করে যুবদল কর্মীদের ছোড়া ইটে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা গেছেন শাওন। ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্টেও গুলির কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ময়নাতদন্তে উল্লেখ করা হয়েছে শাওনের মাথার পেছনে থেঁতলানো আঘাতের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। থেঁতলানোটা ইটের আঘাত। যা আপনাদের তোলা ছবি ও ভিডিওতে আমরা দেখেছি।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান আল মামুন বলেন, গত ২১ সেপ্টেম্বর একটি অবৈধ কর্মীসভা (ওই সভার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়নি) থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে যুবদলের কর্মী শাওন তার সঙ্গে থাকা বিএনপির অপর এক কর্মীর পেছন থেকে ছোড়া ইটে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। আহত অবস্থায় তাকে মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে না নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। যুবদল কর্মী শাওন পর দিন ২২ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ৯টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়।

মৃত্যুর পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে নিহত শাওনের মরদেহের সুরতহাল সম্পন্ন করে। ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে হস্তান্তর করে।  ফরেনসিক বিভাগ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে চূড়ান্ত মতামত প্রদানের জন্য ভিসেরা পরীক্ষা করে। সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মাথায় আঘাতজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে মতামত দেওয়া হয়।  রিপোর্টে মাথার পেছনে থেঁতলানো আঘাত রয়েছে বলে উল্লেখ আছে। গান শুটের কোনো আঘাত নেই। ইটের আঘাতেই শাওনের মৃত্যু হয়েছে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নিহত শাওনের মা লিপি আক্তার বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা দেখেছি আমার ছেলে গুলিতে মারা গেছে। কিন্তু ওরা বলছে ইটের আঘাতে মারা গেছে। এটা আমাদের বলানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। 

কারা চাপ প্রয়োগ করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা চাপ প্রয়োগ করছে। তাদের ভয়ে আমার স্বামী ও সন্তানরা আত্মগোপনে আছে। কোথায় আছে আমি তা বলতে পারি না।  
লিপি আক্তার বলেন,হাসপাতালের রিপোর্টে বলা হচ্ছে, গুলির আঘাতে শাওন মারা গেছে। অথচ তারা সেই রিপোর্টকে মিথ্যা বলছে।

প্রসঙ্গত, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গত ২১ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টার দিকে মুন্সীগঞ্জ শহরের উপকন্ঠ মুক্তারপুর এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করে জেলা বিএনপি। সেখানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ১৬ পুলিশসহ অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়। গুরুতর আহত বিএনপি কর্মী শাওন ২২ সেপ্টেম্বর রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় পুলিশ ও এক শ্রমিক লীগ নেতা বাদী হয়ে দুটি পৃথক মামলা করেন।

ব.ম শামীম/আরএআর