স্বামীর খোঁজে স্বামীর বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন লায়লা বেগম ও তার সন্তানরা

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার নাজিমখান ইউনিয়নের রামসিং বাইশেরপাড় এলাকায় স্বামী ও পিতৃপরিচয়ের দাবিতে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে অনশন করছেন লায়লা বেগম নামের এক নারী। সোমবার (১ মার্চ) সকাল থেকে স্বামী শ্রী পরেশ চন্দ্র মন্ডলের বাড়িতে এ অনশন করছেন লায়লা বেগম ও তার সন্তানরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৩ সালে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ধামর গ্রামের নজরুল ইসলামের মেয়ে মোছা. লায়লা বেগমের (৩৩) সঙ্গে রাজারহাট উপজেলার নাজিমখান ইউনিয়নের রামসিং বাইশেরপাড় এলাকার মৃত নরেন্দ্র নাথ মন্ডলের ছেলে শ্রী পরেশ চন্দ্র মন্ডলের বিয়ে হয়। পরেশ হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মো. আবদুল হামিদ নামে আদালতের স্বীকৃতিনামার (কোর্ট এফিডেভিট) মাধ্যমে ফুলবাড়ীয়ায় পারিবারিকভাবে লায়লা বেগমের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। দাম্পত্য জীবনে তাদের ২০০৫ সালের ৫ ডিসেম্বরে একটি ছেলেসন্তান ও ২০০৭ সালের ৫ অক্টোবরে একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়।

২০০৮ সালে আবদুল হামিদ পরিবারকে চাকরির বদলিজনিত কথা বলে কুমিল্লায় চলে যান। এরপর তিনি লায়লার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ রাখেননি। এদিকে লায়লা বেগম তার সন্তানদের নিয়ে স্বামীকে অনেক খোঁজাখুঁজির পর দেখা না পেয়ে চরম বিপাকে পড়েন। তিনি সন্তানদের নিয়ে গাজীপুর সদর উপজেলার রাতুল গলির নুর ভিলা নামের একটি ভাড়া বাসায় ১২ বছর দুটি সন্তান ও বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে আসছিলেন।

এ অবস্থায় আবদুল হামিদের এইচএসসি পাসের একটি মার্কশিট খুঁজে পান লায়লা বেগম। এর সূত্র ধরে সোমবার সকালে আবদুল হামিদের বাড়িতে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে লায়লা বেগম অনশন শুরু করেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে লায়লা বেগমের আসার খবর পেয়ে আবদুল হামিদের পরিবারের লোকজন বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।

এ বিষয়ে অনশনরত লায়লা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ১২ বছর ধরে আমার সন্তানদের নিয়ে কষ্টে আছি। আমি তাদের বাবার পরিচয় দিতে পারছি না। এতদিন পর আমার স্বামীর বাড়ির ঠিকানা খুঁজে পেয়েছি। কিন্তু এসে দেখি বাড়িতে কেউ নেই। তাই আমার স্বামী না আসা পর্যন্ত অনশন করব। প্রয়োজনে মরণের আগ পর্যন্ত।

লায়লা বেগমের সন্তান মেহেদী হাসান রিপন (১৬) ও নুশরাত জাহান ইলমা (১৪) বলে, আমরা জন্মের পর থেকে বাবাকে দেখিনি। আজ আমরা বাবার ঠিকানা খুঁজে পেয়েছি। তাই বাবাকে না দেখা পর্যন্ত আমরা এখান থেকে যাব না। বাবা যদি না আসেন এবং আমাদের পিতৃপরিচয় না দেন, তাহলে আমার এখানেই ‘আত্মহত্যা’ করব।

স্বামীর খোঁজে স্বামীর বাড়িতে সন্তানসহ অনশনরত লায়লা বেগম

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আবদুল হামিদের (পরেশ চন্দ্র) সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

নাজিমখান ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আজিজার রহমান বলেন, এক নারী পরেশ চন্দ্রকে স্বামী দাবি করে তার বাড়িত অনশন করছেন। আজ জানলাম পরশ মুসলিম হয়ে বিয়ে করেছে ওই নারীকে। পাঁচ বছর সংসার করার পর সে সেখান থেকে উধাও হয়ে যায়। আরও অভিযোগ রয়েছে, পরেশ ২০০৯ সালে রংপুরের গঙ্গাচড়া এলাকায় শ্রী হরিশংকরের মেয়ে শ্রী কল্পনা রানীকে বিয়ে করে।

নাজিমখান ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবদুল মালেক পাটোয়ারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুনেছি লায়লা নামের এক নারী স্বামীর দাবিতে স্বামীর বাড়িতে অবস্থান করছেন। এর আগেও এই নারী একবার এসেছিলেন।

রাজারহাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাজু সরকার ঢাকা পোস্টকে জানান, লায়লা বেগম নামের ওই নারী থানায় এসেছেন। অভিযোগ শুনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. নুরে তাসলিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি এ ব্যাপারে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।

মো. জুয়েল রানা/এনএ