পরিবেশ বিধ্বংসী পলিথিন পুড়িয়ে পরীক্ষামূলকভাবে জ্বালানি তেল উৎপাদন শুরু হয়েছে বরিশাল বিসিক শিল্প নগরীতে। সেই তেলে চলছে মোটরযান। খবর পেয়ে দেখতে ভিড় করছে উৎসুক জনতা।

জানা গেছে, টানা তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা উৎপাদন পদ্ধতিতে প্রদত্ত পলিথিনের চেয়েও দুই লিটার বেশি জ্বালানি পাওয়া যায়। আরও কয়েকদিন প্লান্ট পর্যবেক্ষণ করে বৃহৎ পরিসরে উৎপাদনে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তা এম এ রশিদ আরিফ।

বরিশাল নগরীতে সামান্য বৃষ্টি বা কীর্তনখোলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেই নগরীর বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যায়। নদীর পানি কমতে থাকলেও নগরী থেকে পানি নিষ্কাশনে অনেক সময় লাগে। মূলত ড্রেনেজে পলিথিন জমে থাকায় নিষ্কাশনে সময় লাগে। এই সমস্যার সমাধান চিন্তা করতে গিয়েই পলিথিনের বিকল্প ব্যবহারের উপায় খোঁজেন।

বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে বিসিকের হাসিনা কুটির শিল্পের বর্ধিতাংশে পরীক্ষামূলক প্লান্টে কথা হয় রশিদ আরিফের সঙ্গে। তিনি বলেন, পলিথিনের বিকল্প ব্যবহারের চিন্তা আগে থেকেই ছিল। ইউটিউবে পলিথিন পুড়িয়ে জ্বালানি তেল উৎপাদনের প্লান্ট দেখে উৎসাহ পাই। তা দেখে প্লান্ট প্রস্তুতের পর বেশ কয়েক দিন চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হই। এরপর পুনরায় নিজের মতো করে প্লান্টটি তৈরি করি। আর গত তিন দিন ধরে প্লান্টে সঠিকভাবে জ্বালানি উৎপন্ন হচ্ছে।

তিনি বলেন, পলিথিন পুড়িয়ে এই প্লান্টের মাধ্যমে একই সঙ্গে ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন ও রান্নার উপযোগী গ্যাস উৎপন্ন সম্ভব। আমি ১৫ কেজি পলিথিন পুড়িয়ে ১৭ কেজি জ্বালানি তেল পেয়েছি। বিসিক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মৌখিক অনুমতি নিয়ে কাজ করছি প্রাথমিক স্টেজে। চিন্তা আছে ব্যবসায়িকভাবে উৎপাদনে যাব। এজন্য বিসিক অনুমতি দিলে এই শিল্পাঞ্চলের মধ্যে কারখানা গড়ে তুলব। অনুমতি না পেলে বিসিকের বাইরে করব।

আরিফ বলেন, আমার উদ্দেশ্য প্রতিদিন এক থেকে দুই মেট্রিক টন জ্বালানি তেল উৎপাদন করতে পারে এমন প্লান্ট নির্মাণ করা। এতে করে নগরী থেকে পলিথিন কমে আসবে আর বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের সংকটের সময় স্থানীয়ভাবে কিছু চাহিদা পূরণ সম্ভব।

প্লান্টে উৎপাদিত পেট্রোল দিয়ে নিজের গাড়ি চালাচ্ছিলেন মাসুম রেজা। তিনি বলেন, আমার গাড়িতে আধা লিটারের মতো ফিলিং স্টেশন থেকে নেওয়া পেট্রোল ছিল। তা সকলের সামনেই বের করে পলিথিন পোড়ানো প্লান্টে উৎপন্ন পেট্রোল ঢুকালাম। এরপর গাড়ি চালাতে গিয়ে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয়নি। গাড়ি স্বাভাবিকভাবেই চলছে।

প্লান্ট দেখতে আসা সরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা মাকসুদুল হাসান মনির বলেন, পলিথিন পুড়িয়ে জ্বালানি উৎপাদনে দুই ধরনের উপকার হবে। প্রথমত আর্থিকখাতে যে লোকসান দিয়ে জ্বালানি আমদানি করা হয় তা কমানো সম্ভব। দ্বিতীয়ত পরিবেশ নষ্টকারী পলিথিন কমে আসবে। আজ প্লান্ট দেখতে এসে ভালোই লাগছে। সরকারের উচিত সম্ভাবনাময় এমন উদ্যোক্তার পাশে এসে দাঁড়ানো।

বরিশাল বিসিক জেলা কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক জালিস মাহমুদ বলেন, এমন কোনো প্লান্টের বিষয় আমার জানা নেই। তবে প্লান্ট তৈরি করে যদি সফল হন এবং পরিবেশগত কোনো সমস্যা না থাকে, তাহলে অবশ্যই উদ্যোক্তার পাশে বিসিক থাকবে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এসপি