মেহেরপুরের আমঝুপির ইসলামনগর মাঠে সমন্বিত মালটা বাগান করে সাড়া ফেলেছেন পাঁচ বন্ধু। ইতোমধ্যে সফলতাও পেয়েছেন তারা। স্থানীয়ভাবে বাজার সৃষ্টি হওয়ায় তাদের দেখাদেখি অনেকেই মালটা চাষ শুরু করেছেন। মালটা চাষে আগ্রহী করে তুলতে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও উদ্বুদ্ধকরণসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে সবুজ মালটা। সেইসঙ্গে দোল খাচ্ছে বাগান-মালিকদের স্বপ্ন। মালটা পাহাড়ি ফল হিসেবে পরিচিত হলেও সমতল ভূমিতেও রয়েছে এ ফলের ব্যাপক সম্ভাবনা। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া মালটা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। অন্যান্য ফল চাষে কম-বেশি ঝুঁকি থাকলেও, মালটা চাষে কোনো ঝুঁকি নেই। তাইতো বছর চারেক আগে মালটা চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেন মেহেরপুরের আমঝুপি গ্রামের পাঁচ বন্ধু। তারা ৩৩ বিঘা জমিতে মাল্টা বাগান করেছেন। 

বাগান মালিক মাজিদুল হক জানান, তারা প্রথমে ১০ বিঘা জমিতে শুরু করেন মালটা চাষ। স্থানীয় বাজারসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে উৎপাদিত মালটার চাহিদা ও দাম পাওয়ায় পরে আরও ২৩ বিঘা জমিতে বাগান করা হয়। প্রতি বিঘা মালটা বাগানে খরচ হয় প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকা। গেল বছর ২০ লাখ টাকার মালটা বিক্রি করেন তারা। জেলায় বর্তমানে মালটা বাগানের পরিধি বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১০ হেক্টর। এছাড়া এ বছর নতুন বাগান তৈরিতে জমি বাড়িয়েছে অনেক চাষি।

একই কথা জানিয়েছেন সুমন, লিটন মোতালেব ও হাফিজুর। তারা জানান, কৃষি অফিস যদি চাষিদের খুব কাছাকাছি থেকে পরামর্শ দেন তাহলে অনেকেই এই লাভজনক মালটা বাগান করতে আগ্রহী হতো। 

আমঝুপি গ্রামের কলেজছাত্র ইলিয়াস ও আলীম বলেন, মালটা বাগানে কাজ করে অনেক শিক্ষিত বেকার ও শিক্ষার্থীরা তাদের পড়ালেখার খরচ চালাচ্ছে।

মালটার পাইকারি ব্যবসায়ী সুমন আহম্মেদ বলেন, মালটার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা আমাদের জমি থেকে সরাসরি কিনে নিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে চাষিরা ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারদের কাছে মালটা বিক্রি করছে। তবে গেল বছর দাম একটু বেশি ছিল। স্থানীয় ব্যবসায়ী ছাড়াও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের ফল ব্যবসায়ীরা আসছেন মালটা কিনতে। স্থানীয়ভাবে বাজার সৃষ্টি হওয়ায় মালটা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই। 

গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার লাভলী খাতুন বলেন, মালটা চাষ লাভজনক হওয়ায় ইতোমধ্যে আগ্রহী চাষিদের প্রশিক্ষণসহ নানা ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আগামীতে জেলায় মালটা বাগানের পরিধি আরও বাড়বে।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শংকর কুমার মজুমদার বলেন, গেল বছর মালটা বাগান ছিল ১০ হেক্টর জমিতে। এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১০ হেক্টর। মেহেরপুরে বর্তমানে বারি-১ ও বারি-২ জাতের মালটা বাগান করছে কৃষকরা। আমরা শিক্ষিত বেকার যুবকদের মালটা বাগান করার পরামর্শসহ সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি।

আকতারুজ্জামান/এসপি