রোপা আমন ও গ্রীষ্মকালীন সবজি পোকা-মাকড়ের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে কীটনাশক ব্যবহারের পরিবর্তে আলোক ফাঁদের ব্যবহার মেহেরপুরের কৃষকদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এটি এক দিকে যেমন পরিবেশবান্ধব, তেমনি এর মাধ্যমে ক্ষতিকর শত্রু পোকা ও উপকারী বন্ধু পোকা নির্ণয় করা সহজ হচ্ছে।

মেহেরপুরে আলোক ফাঁদ ব্যবহারকারী কৃষক সাইদুল ইসলাম, বাবলু রহমান ও হাশেম আলী বলেন, আমরা জমিতে যে ফসল ফলায় তা শুধু বিক্রি করি না, পরিবারের লোকজনও খেয়ে জীবন বাঁচায়। কীটনাশক খেয়ে খেয়ে আমরা দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছি। তাই আমরা কীটনাশক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বিকল্প পদ্ধতির পরামর্শ চাই কৃষি অফিসে। তারা আমাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আলোক ফাঁদ স্থাপনের সুযোগ করে দিয়েছে। 

তারা আরও বলেন, আলোক ফাঁদের মাধ্যমে ক্ষতিকর পোকা নিধনে কোনো খরচ নেই। এই পদ্ধতিতে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না বলে পরিবেশেরও কোনো ক্ষতি হয় না। কীটনাশক ব্যবহার না করেও এবার আমন ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন উপজেলার কৃষকরা।

গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তা আব্দুস সামাদ বলেন, আলোক ফাঁদ ধানের পোকা দমনে একটি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি। আলোক ফাঁদ তৈরিতে হারিকেন, বৈদ্যুতিক বাল্ব ও সৌরবিদ্যুতের সোলার প্যানেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ধানক্ষেত থেকে ৫০-১০০ মিটার দূরে ফাঁকা জায়গায় বাঁশের খুঁটির সাহায্যে মাটি থেকে ২-৩ ফুট ওপরে একটি বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালিয়ে এর নিচে একটি পাত্রে ডিটারজেন্ট পাউডার অথবা কেরোসিন মিশ্রিত পানি রাখা হয়। সন্ধ্যার পর এই আলোক ফাঁদের আলোয় আকৃষ্ট হয়ে ধানক্ষেতের বিভিন্ন পোকামাকড় এসে পাত্রের পানিতে পড়ে। এভাবে আলোক ফাঁদ ব্যবহার করে ধানসহ ফসলের ক্ষতিকর ও উপকারী পোকার উপস্থিতি নির্ণয় ও নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অতি অল্প খরচে তৈরি এ আলোক ফাঁদ অন্ধকার রাতে দেখতেও বেশ দৃষ্টিনন্দন।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, আমন ক্ষেতে কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে উপজেলার ২৮টি ব্লকের প্রতিটিতে একটি করে আলোক ফাঁদ প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়েছে এবং এর উপকারিতা সম্পর্কে কৃষকদের সচেতন করা হচ্ছে। কৃষি দপ্তরের এ প্রদর্শনী দেখার পর উৎসাহিত হয়ে শতাধিক কৃষক নিজ উদ্যোগে আলোক ফাঁদের মাধ্যমে ক্ষতিকর পোকা নিধন করছেন। কৃষকদের এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। প্রতি সোমবার উপ-সহকারী কৃষি অফিসাররা নিজ নিজ ব্লকে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেন।

কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ লাভলী খাতুন জানান, এবারে উপজেলায় ১৩ হাজার ৬১০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করা হয়েছে। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে। পোকামাকড়ের ক্ষতির হাত থেকে ফসল রক্ষায় ও পোকা দমনে কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে পরিবেশবান্ধব আলোক ফাঁদ স্থাপনে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

আকতারুজ্জামান/এসপি